ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এসির বাতাসে শিশু কী নিরাপদ?

এসির বাতাসে শিশু কী নিরাপদ?

একটু বেলা বাড়তে না বাড়তেই রোদের তেজ চোখে ধাঁধা লাগায়। বসন্তকাল শুধুই ক্যালেন্ডারের পাতাতেই চলমান, খোলা আকাশের নিচে তীব্র গরম। চৈত্র মাস শেষের দিকে। কদিন পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে গ্রীষ্মকাল। তবে ঘরে ঘরে এসি (এয়ার কন্ডিশনার) বা এয়ার কুলার চলতে শুরু করেছে আরও আগেই। এসি একসময় বিলাসিতা হিসেবেই দেখা হতো, তবে বর্তমানে এটি একটি অপরিহার্য গৃহস্থালি যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

এটি শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। অতিরিক্ত গরমে শিশুর কষ্ট হবে ভেবে সারাদিন আপনার শিশুকে এসি ঘরে রাখছেন কি?

শিশুদের শরীর প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে আলাদা। ফলে দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই এসি ব্যবহারের সময় সার্বিক দিক থেকে তাদের আরামপ্রদ পরিবেশ ও নিরাপত্তা বজায় রাখা জরুরি। জেনে নিন এসিতে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ ও তা থেকে বাঁচার উপায়-

এসি থেকে নির্গত জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস) : শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য এসির সবচেয়ে গুরুতর বিষয়টি হচ্ছে এর বাতাসের সঙ্গে নির্গত জীবাণু। বিশেষত সময়মতো পরিষ্কার করা না হলে এসির বাতাস রীতিমতো বিষাক্ত হয়ে যায়। কারণ দীর্ঘদিন নোংরা থাকা এসিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস জন্ম নেয়। এই জীবাণুগুলো বাতাসে সঞ্চালিত হয়ে শিশুদের দেহে প্রবেশ করে। এর ফলে শিশুদের নানা ধরনের বায়ুবাহিত রোগে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

শিশুর দুর্বল শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : এসি থেকে ক্রমাগত ঠান্ডা বাতাসে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুরা অভ্যস্ত হতে পারে না। এ মূল কারণ হচ্ছে এমন পরিবেশের জন্য শিশুদের শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও পরিপক্ক নয়। ভয়ের বিষয় হচ্ছে- এসির শীতলতার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার পরিবর্তে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্টো বরং কমে যেতে পারে। এটি ক্রমশ তাদের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে ফেলে। ফলে তারা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়।

তাপমাত্রার হঠাৎ ওঠানামা : অনেকটা সময় এসি রুমে থাকার পর হঠাৎ সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের গরম বাতাস রীতিমত হামলে পড়ে। এরকম দ্বৈত আবহাওয়া শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিষয়টি বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এসি রুমে প্রবেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাপমাত্রার এই আকস্মিক ওঠাণ্ডনামা শিশুর শরীরকে সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য অসুস্থতার জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

এসির বাতাসের ফলে সৃষ্ট শুষ্কতা : এয়ার কুলার ও এসির শুষ্ক বাতাস ঘরের আর্দ্রতাকে আশঙ্কাজনক হারে কমিয়ে দেয়। এই শুষ্কতা সরাসরি শিশুর নাসারন্ধ্র ও গলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে শ্লেষ্মা ঝিল্লি। শুষ্ক বাতাস এই বেষ্টনীকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে শিশুদের শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

কুলার বা এসি ব্যবহারের সময় শিশুকে নিরাপদে রাখার উপায়

শিশুর জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রায় এসি চালানো : শুরু থেকেই এসির তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এর মধ্যে রাখা আবশ্যক। এই তাপমাত্রা প্রচন্ড শীতলতা ছাড়াই শিশুর সংবেদনশীল শরীরকে উত্তাপ থেকে স্বস্তি দিতে যথেষ্ট। উষ্ণ দাবদাহ থেকে দ্রুত স্বস্তি পেতে কখনোই খুব কম তাপমাত্রায় এসি সেট করা যাবে না।

শিশুর ত্বকের সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখা : এসি থেকে নির্গত শুষ্ক বাতাসে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে বেশ কিছু সফ্ট বেবি ক্রিম বা নিরাপদ ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। এগুলো ব্যবহারে শিশুর কোমল ত্বক হাইড্রেটেড থাকে এবং এসির শুষ্কতা সরাসরি ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারবে না।

শিশুকে আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে রাখা : এই প্রয়োজনীয় বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাতাস চলাচলকারী কটনের কাপড়গুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। এই পোশাক সহজেই ঘরের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারে। অনেকক্ষণ এসি চলার কারণে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে অতিরিক্ত হালকা কাপড় বা চাদর যোগ করা যেতে পারে। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন শিশুর অস্বস্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

এসির সরাসরি বাতাস শিশুর দিক থেকে সরিয়ে রাখা : ঘরের যে অংশে শিশু থাকবে সেখানে এসি বা কুলারের বাতাস সরাসরি পড়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহকে একদম উপরে সিলিংয়ের দিকে সেট করে রাখা উচিত। এতে ঠান্ডা বাতাস সরাসরি ঘরের মাঝে না পড়ে ধীরে ধীরে সমস্ত ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

শিশুর শরীরের তাপমাত্রার প্রতি খেয়াল রাখা : এসি রুমে থাকার সময় কিছুক্ষণ পর পর শিশুর গায়ে আলতো হাত বুলিয়ে তার হাত-পা ও ঘাড় পরীক্ষা করা উচিত।

শরীরে অল্প শীতলতা বা আর্দ্রতাকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে অতিরিক্ত কাপড় পড়াতে হবে বা চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অপরদিকে ঘাম হলে তোয়ালে দিয়ে তা মুছে দিয়ে কাপড় অপসারণ করা বা এসি অল্প কমিয়ে দেয়া যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত