ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্রীলঙ্কায় আর্থিক সংকটে ঝরে পড়ছে স্কুলশিক্ষার্থী

শ্রীলঙ্কায় আর্থিক সংকটে ঝরে পড়ছে স্কুলশিক্ষার্থী

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রায় এক বছর ধরে চলছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির সাধারণ মানুষের ওপর। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, একাধিক সন্তানের মধ্যে একজনকে স্কুলে পাঠানোর জন্য অন্যদের বাড়িতে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। আর তাই আর্থিক সংকটের জেরে সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ বছর বয়সী মালকি তার বিছানায় বসে থাকা অবস্থায়ই বেশ উত্তেজিত। সে তার দুই বোন এবং দুই ভাইয়ের ১ ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠেছে যাতে সে তার নখ থেকে কিছু উজ্জ্বল লাল বস্তু সরিয়ে ফেলতে পারে। আজ স্কুলে তার প্রথম দিন এবং সে এ বিষয়ে নিখুঁত হতে চায়। তবে তার ভাইবোনদের অবশ্যই বাড়িতে থাকতে হবে। কারণ, মালকির পরিবার শুধু তাকেই স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য রাখে।

ছয় মাস আগে, শ্রীলঙ্কা তার স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের সাক্ষী হয়েছে। যদিও বর্তমান সময়ে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে অনেকাংশে শান্ত অবস্থা ফিরে এসেছে, তারপরও গণ বেকারত্ব এবং পণ্যদ্রব্যের নাটকীয় মূল্যবৃদ্ধির সম্পূর্ণ প্রভাব এখনও অনেক পরিবারের মধ্যে দৃশ্যমান।

বিবিসি বলেছে, মালকির মা প্রিয়ন্তিকাকে তার বাচ্চাদের স্কুলে পড়া বন্ধ করতে হয়েছে, যাতে তারা আতশবাজি বিক্রি করে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং একই সময়ে মুদ্রাস্ফীতিও সর্বকালের সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

বেশ কিছুদিন ধরে মালকির পরিবারের কেউ (প্রয়োজন মতো) খাবার খেতে পায় না। শ্রীলঙ্কায় স্কুলে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ থাকলেও সেখানে খাবার দেয়া হয় না। এর সঙ্গে ইউনিফর্ম এবং পরিবহণের খরচ যোগ করলে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে শিক্ষা একটি বিলাসবহুল বিষয়, যা মালকির মা প্রিয়ন্তিকা আর বহন করতে পারছেন না।

প্রিয়ন্তিকা বলেছেন, যদি তারা স্কুলে ফিরে যেতে চায় সেজন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রুপি প্রয়োজন। নিজের এক বেড-রুমের ঘরে সজল চোখে তিনি বলেন, এসব বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলে যেত। এখন তাদের (স্কুলে) পাঠানোর টাকা আমার কাছে নেই।

১০ বছর বয়সি মালকি এখন স্কুলে যেতে পারছে কারণ তার জুতা এবং ইউনিফর্ম এখনও মানানসই। কিন্তু মালকির ছোট বোন দুলাঞ্জলি বিছানায় শুয়ে কাঁদছে, মন খারাপ করে আছে। কারণ, সে স্কুলে যেতে পারছে না। (দুলাঞ্জলিকে) প্রিয়ন্তিকা বলেছেন, আমার প্রিয়তম, কেঁদো না। আমি চেষ্টা করব, কাল তোমাকে নিয়ে যাব। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাদা সুতির ইউনিফর্ম পরে নোংরা রাস্তা ধরে ক্লাসে যাওয়া শিশুরা মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে বসে বা টুক-টুক গাড়িতে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে প্রক্রমা ওয়েরাসিংহেও যেন ক্লান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

তিনি কলম্বোর কোটাহেনা সেন্ট্রাল সেকেন্ডারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রতিদিন (শিক্ষার্থীদের) এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখেন। প্রক্রমা ওয়েরাসিংহে বলেন, স্কুলের দিন যখন আমরা সকালের সমাবেশ করি, তখন শিশুরা ক্ষুধায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সরকার বলেছে, তারা স্কুলে চাল বিতরণ শুরু করেছে, কিন্তু এমন বেশ কয়েকটি স্কুল কোনো সাহায্য পায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ওয়েরাসিংহে বলেন, স্কুলে ছাত্রদের উপস্থিতি ৪০ শতাংশের মতো কমে গেছে। আর তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসা অব্যাহত রাখতে শিক্ষকদের অতিরিক্ত খাবার আনতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। জোসেফ স্ট্যালিন সিলন শিক্ষক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিশ্বাস করেন, খরচের কারণে শিক্ষা ছেড়ে দেয়া পরিবারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সম্পর্কে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে অসচেতন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত