ইরানের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন চীনের

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অন্যদিকে, তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির উন্নয়নের জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বেইজিং এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে ব্যস্ত।

চীনের রাষ্ট্রীয় টিভির ওয়েবসাইটে গত মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইরানকে সমর্থন করে চীন। আমরা একতরফাবাদ ও গুন্ডামি প্রতিরোধে সবসময় সতর্ক। ২০ বছরের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্টের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের আতিথ্য করছে এশিয়ান অর্থনৈতিক জায়ান্ট চীন। বেইজিংয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করেন দুই প্রেসিডেন্ট।

বিবৃতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ইরানের পারমাণবিক সমস্যার যথাযথ সমাধানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি ইরানের প্রেসিডেন্টকে বলেছি যে তাদের পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নে আলোচনা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা চালিয়ে যাব আমরা।

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকে সীমিত করা হয়েছিল। তবে ইরানের দাবি, শান্তিপূর্ণ কারণে পারমাণবিক শক্তির আরও উন্নয়ন করছে তারা। ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তিটি থেকে সরে আসেন। তিনি বলেছিলেন, এটি তেহরানের পারমাণবিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। চুক্তি থেকে সরে ফের ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে আসছে চীন। তারা জোর দিয়ে বলেছে, চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রথম পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া উচিত।

গত সেপ্টেম্বরে ইরানের তেল রপ্তানির সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র; যার মধ্যে চীনভিত্তিক পাঁচটি সংস্থা রয়েছে। ওয়াশিংটন বলছে, যতক্ষণ না তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে, ততক্ষণ তারা ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখবে। ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে বেইজিংয়ে ইরানের একটি বৃহৎ বাণিজ্য ও অর্থ প্রতিনিধিদল রয়েছে। এর আগে চীনে তাকে লাল গালিচায় অভ্যর্থনা জানানো হয়।

শি বলেন, বিশ্ব, সময় এবং ইতিহাসের বর্তমান জটিল পরিবর্তনের মুখে চীন এবং ইরান একে অপরকে সমর্থন করেছে। সংহতি ও সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের চাপ : ইউক্রেন যুদ্ধে প্রশ্নে চীন ও ইরান দুই দেশই পশ্চিমাদের চাপের মুখে আছে। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে এরই মধ্যে ইরান কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। আলজাজিরার সাংবাদিক ক্যাটরিনা ইউ বলেন, চীন হলো ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তাদের অনুমোদিত তেল রপ্তানির একমাত্র গ্রাহক। মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ইরানকে ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে মস্কোকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেওয়ায় রাশিয়ার অবশিষ্ট মিত্রদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইরান। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহ করার অভিযোগ এনেছে তেহরানের বিরুদ্ধে, যা অস্বীকার করছে ইরান। ওয়াশিংটন ডিসেম্বরে জানায়, ইরান এবং রাশিয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান এবং ড্রোনের মতো সরঞ্জাম আদান-প্রদান ব্যাপকভাবে হচ্ছে। ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণ বেইজিংয়ের জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয়। এ ইস্যুতে বেইজিং তার কৌশলগত মিত্র রাশিয়াকে কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়ার সময় নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে চেয়েছে।