ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তিন যুগে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে আর্জেন্টিনা

তিন যুগে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে আর্জেন্টিনা

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯১ সালের পর এত বেশি মাত্রার মূল্যস্ফীতি দেখেনি এ দেশ। দেশটির সর্বশেষ ভোক্তামূল্য সূচকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিকস অ্যান্ড সেন্সাস (আইএনডিইসি) গত মঙ্গলবার ফেব্রুয়ারি মাসের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে আর্জেন্টিনার বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ১০২ দশমিক ৫ শতাংশ চিহ্নিত হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় আইএনডিইসি।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শুধু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে দেশটির খাদ্য ও পানীয়পণ্যের ওপর। তাছাড়া, দেশটির খাদ্যসংক্রান্ত খরচ ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য ডিম, মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছে আইএনডিইসি।

এদিকে, গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা ও উত্তর কোরিয়েন্তেস প্রদেশে ভয়ংকর দাবানলে কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি এ মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পাশাপাশি ভুট্টা, গম ও সয়াবিনের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক দেশ আর্জেন্টিনা। কিন্তু পাম্পাস নামে পরিচিত উর্বর তৃণভূমিতে কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে শস্য উৎপাদনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

স্থানীয় শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের প্রত্যাশিত কৃষি ফলন এতটাই কমেছে, যা চলতি শতকের সর্বনিম্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অত্যাধিক তাপমাত্রায় ২০২২ সালের মে থেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আর্জেন্টিনার কৃষি।

দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আর্জেন্টিনা। কিন্তু গত শতাব্দী থেকেই দেশটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮০’র দশকে সৃষ্ট ঋণসংকটের ফলে আর্জেন্টিনায় চরম ও দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছিল। তবে এ সংকট সবচেয়ে বেশি ঘনীভূত হয় ১৯৮৯ সালে। ক্ষেত্রবিশেষে ওই সময় দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩ হাজার শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এ সংকটের পাশাপাশি আর্জেন্টিনাকে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ঋণের সঙ্গেও লড়াই করতে হচ্ছে। ২০১৮ সালে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ নেয়, যা খোদ আইএমএফের ইতিহাসেও সবচেয়ে বড় ঋণ প্যাকেজ। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে ও দেশটি তার ঋণ পরিশোধ পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খেতে শুরু করে। ২০১৮ সালের ঋণ পরিশোধ পরিকল্পনা প্রতিস্থাপনের জন্য ২০২২ সালে আইএমএফর সঙ্গে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে দেশটি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার সময় আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের বাসিন্দা আইরিন দেবিতা বলেন, আমাদের আর কিছুই নেই। চলার মতো পর্যাপ্ত টাকাও নেই। জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতেও হিমশিম খাচ্ছি। প্যাট্রিসিয়া কুইরোগা নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতায় আমরা হতাশ। মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে। এসব দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। চলতি বছরের অক্টোবরে আর্জেন্টিনায় প্রেসিডেন্ট ও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত