মার্কিন কংগ্রেসে প্রশ্নবাণে জর্জরিত টিকটক সিইও

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

টিকটকের প্রধান নির্বাহী শো জি চিউ মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হয়েছিলেন গত বৃহস্পতিবার। সেখানে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা আইনপ্রণেতাদের একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন তিনি। এদিন চীনা অ্যাপটির বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা যেভাবে একাট্টা হয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেটি বেশ বিরল ঘটনা।

মার্কিন সিনেটররা সম্প্রতি এমন একটি বিল উত্থাপন করেন, যেটি পাস হলে টিকটকসহ যে কোনো বিদেশি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, এমনকি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা পাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের সামনে এর আগেও বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের হাজির হতে হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে টিকটকের ক্ষেত্রে শুনানিতে যেভাবে একের পর এক আক্রমণাত্মক প্রশ্ন ধেয়ে গেছে, সেটি আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান কেউই ছাড় দেয়নি টিকটককে।

অ্যাপটির এক মুখপাত্র শুনানি শেষে বলেছেন, মার্কিন রাজনীতিবিদরা মূলত লোক দেখানোর জন্য এমনটি করেছে।

শুনানিতে টিকটক সিইও বারবার ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’র কথা উল্লেখ করেন। এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সব তথ্য সেদেশেই জমা রাখা হয় এবং এই প্রজেক্টের দেখাশোনার দায়িত্বেও রয়েছে মার্কিন কোম্পানি ওরাকল।

তবে, প্রজেক্ট টেক্সাস এখনো পুরোপুরি কাজ করছে না। তাই এখন পর্যন্ত চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু তথ্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন চিউ। তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক আন্তঃকার্যক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল, তাই চীনের প্রকৌশলীদের এসব তথ্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে।

চিউয়ের এই স্বীকারোক্তি নিয়েই বারবার প্রশ্ন তুলতে থাকেন মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা। তাদের যুক্তি, চীনের প্রকৌশলীরা যদি তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে সেখান থেকে চীনা সরকার তথ্য না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

শুনানিতে চিউয়ের আত্মপক্ষ সমর্থনে যে জায়গায় সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, সেটি সম্ভবত বাইটড্যান্সের সঙ্গে টিকটকের দূরত্ব প্রমাণে।

যেভাবেই বলা হোক না কেন, চীনা কোম্পানিটিই টিকটকের মালিক। চিউ নিজেও একসময় বাইটড্যান্সের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ছিলেন।

শুরুতে চিউ বলতে চাননি, তিনি বাইটড্যান্সের মালিকানার অংশীদার ছিলেন কি না। তবে আইনপ্রনেতাদের চাপে একসময় তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন।

শুনানিতে চিউ অধিকাংশ সময় মার্কিন কংগ্রসকে পাল্টা আক্রমণ করা থেকে বিরত ছিলেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে তিনি সেটি ভালোভাবেই করতে পেরেছেন।

ব্যবহারকারীদের তথ্য নিয়ে টিকটক কী করে, এমন প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে চিউ বলেন, সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমেরিকান কোম্পানিগুলোরও কিন্তু ডেটা সংরক্ষণের খুব ভালো রেকর্ড নেই... শুধু ফেইসবুক আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই দেখুন।

তার এই মন্তব্যের পেছনে অবশ্য যুক্তি রয়েছে। ফেইসবুকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য একটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ও আরেকটি থার্ড পার্টি অ্যাপ নিয়ে নেয়ার বিষয়টি ২০১৮ সালে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল।

শুরু থেকেই টিকটকের বিরুদ্ধে দুই দল এক হয়ে যেভাবে সমালোচনা করতে থাকে, তা বেশ বিরল। এ বিষয়ে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার বলেন, কংগ্রেস ইতিহাসের সবচেয়ে দ্বিদলীয় কমিটিতে স্বাগত।

আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ড্যান ক্রেনশ বলেন, চিউ, আপনাকে ধন্যবাদ, রিপাবলিকান ও ডেমোক্যাটদের এক কাতারে নিয়ে আসার জন্য।

যেসব রাজনীতিবিদ প্রায় কোনো কিছুতেই একমত হন না, সেই তারাই টিকটক যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত।

শুনানি শেষে টিকটক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, তাদের অ্যাপ তথ্য সুরক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে ব্যাপারে খুবই কম নজর দেয়া হয়েছে। তার অভিযোগ, কমিটির সদস্যরা কেউই বলেননি, টিকটকে যে ৫০ লাখ ব্যবসা রয়েছে অথবা যে ১৫ কোটি মার্কিনি টিকটক পছন্দ করেন, তাদের কী হবে। এমন একটি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা) কীভাবে প্রয়োগ করা হবে?