ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে

উৎপাদন বাড়াতে কর্মী পাচ্ছে না কোম্পানিগুলো

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর বেড়েছে অস্ত্রের চাহিদা। ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় পশ্চিমা সরকারগুলো প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়ানোর ফলে মার্কিন ও ইউরোপের অস্ত্র নির্মার্তা কোম্পানিগুলো রেকর্ডসংখ্যক অর্ডার পাচ্ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ সেই চাহিদাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা ইউক্রেনে যে অস্ত্র পাঠিয়েছে, সেগুলোর ঘাটতি পূরণে নতুন অস্ত্র কিনছে। এখন অস্ত্র নির্মাতা ও প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো পড়েছে নতুন জটিলতায়। অস্ত্রের উৎপাদন বাড়াতে কয়েক হাজার দক্ষ কর্মী প্রয়োজন তাদের। কিন্তু কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ দিতে পারছে না।

অস্ত্র কোম্পানিতে কাজের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ দেয়া যেকোনো সময়েই কঠিন। প্রতিরক্ষা কাজের জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট বিশেষ দক্ষতা ও নিরাপত্তা ছাড়পত্র। দক্ষতা আছে এমন কিছু মানুষ আবার অস্ত্র কোম্পানিতে কাজ করার ক্ষেত্রে দ্বিধায় আছেন। আর বড় বড় সব কোম্পানি একসঙ্গে নিয়োগের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করছে, ফলে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি বেড়েছে আরো।

ফরাসি অস্ত্র নির্মাতা থ্যালেসের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিস কেইন গত মাসে বিনিয়োগকারীদের একটি বৈঠকে বলেছিলেন, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে অবশ্যই কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি রয়েছে।

তিনি বলেন, এ বছর কোম্পানিটির ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। শ্রম বাজারে কিছু উত্তেজনা বিরাজ করছে। এগুলো মোকাবিলার জন্য থ্যালেস তার বিদেশি প্রকৌশল কেন্দ্রগুলোর আরো বিকাশের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্বের ওপর নির্ভর করার পরিকল্পনা করেছেন। গত বছর মেধাবী ও দক্ষ কর্মী সংগ্রহে নিজস্ব কর্মসূচির সম্প্রসারণ করেছে।

গত সোমবার স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামের থিংক ট্যাংক প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় গত বছর ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ ২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বছর বছর বৃদ্ধির হারের ক্ষেত্রে ইউরোপের ব্যয় অন্তত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

প্রতিরক্ষা শিল্পের বিস্তৃত সাপ্লাই চেইনে যে সংকট বিরাজ করছে সেটির অংশ কর্মী ঘাটতি। অস্ত্র নির্মাতারা চিপস এবং রকেট মোটরের মতো মূল উপাদানের ঘাটতির পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গেও লড়াই করছে। ফলে অনেক কোম্পানি অর্ডার অনুসারে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারছে না।

গত বছর থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো শ্রমের ঘাটতি মোকাবিলা করছে। ওই সময় মহামারির কারণে চাকরি ছেড়ে যাওয়া অনেকেই কাজে ফিরেনি। তারপর থেকে বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। শ্রম ঘাটতি অনেক। কিন্তু তারা বলছে, গত কয়েক মাসে নিয়োগের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইউরোপে কর্মী নিয়োগের চাপ আরো তীব্র হতে পারে। ইউরোপীয় সরকারগুলো রাশিয়া নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে মার্কিন ছায়ায় থাকা অস্ত্র নির্মাতাদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। এতে করে খাতটিতে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কামানেল গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো।

ইউরোপের বৃহত্তম অস্ত্র নির্মার্তা কোম্পানি বিএই চলতি বছর শিক্ষানবিস ও স্নাতক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ২ হাজার ৬০০ জনকে নিয়োগ দেবে। অন্যান্য পদে আরো কয়েক হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়া হতে পারে।

ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা এমবিডিএ ২ হাজার কর্মী নিয়োগ দিতে চায়। যা কোম্পাইনটির কর্মীবাহিনীর ১৫ শতাংশের বেশি। গ্রিপেন যুদ্ধবিমানের সুইডিশ নির্মাতা সাব এবি এবং লেপার্ড ট্যাংক তৈরিতে সহায়তাকারী জার্মান কোম্পানি রাইনমেটাল এজিসহ অন্যরা হাজার হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এডিএস গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যামি স্টোন বলেছেন, অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো কর্মী নিয়োগ নিয়ে চিন্তিত। প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিভাধার কর্মী নিয়ে কাড়াকাড়ি বাড়ছে। সর্বশেষ নিয়োগের আগে থেকেই শূন্যপদ পূরণে হিমশিম খাচ্ছিল অস্ত্র কোম্পানিগুলো। গত বছরের শেষ দিকে এডিএসের কাছে ১০ হাজারটি শূন্যপদ ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রিক্রুটার কাইরান সøটার বলেন, অস্ত্র নির্মাতাদের জন্য কর্মী নিয়োগ সবসময় কঠিন ছিল। এখন উড়োজাহাজ ও গাড়ি নির্মাতারা দক্ষ কর্মীদের অনেক বেশি বেতন দিচ্ছে। এই দুই খাতে নিরাপত্তা যাচাইয়েরও প্রয়োজন হয় না। সূত্র : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল