‘তাপ বিমা’ চালু হলো ভারতে

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদের একটি বাজারে একটি কাঠের ছোট দোকান আছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমলাবেন অশোকভাই পাতনির। সেখানে পিতল, সিটি গোল্ড এবং বিভিন্ন ধাতু ও প্লাস্টিকের অলঙ্কার বিক্রি করেন তিনি।

বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বরাবরই অনেক বেশি ঝুঁকি-চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, কমলাবেনও তার ব্যতিক্রম নন। তবে তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আবহওয়াগত পরিস্থিতি। আরো স্পষ্টভাবে বললে গুজরাটের দীর্ঘ গ্রীষ্মকাল ও সে সময়কার প্রখর সূর্যের উত্তপ্ত দিনগুলো তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

কারণ, অতিরিক্ত তাপ ও গরমে পিতলের গয়নাগুলো ঔজ্জল্য হারিয়ে কালো হয়ে যায়, সিটিগোল্ড বা ইমিটেশনের তৈরি অলঙ্কারের নকল মুক্তাগুলো আঠা খুলে পড়তে থাকে। এপ্রিল থেকেই তাপ বাড়তে শুরু করে আহমেদাবাদে। এই মাসের শেষ দিকে গুজরাটের রাজধানীর গড় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি উঠে। ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে আহমেদাবাদের তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত বছর গ্রীষ্মে বেশ কিছুদিন আহমেদাবাদের তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি বা তার আশপাশে থেকেছে।

‘অতিরিক্ত তাপমাত্রায় অলঙ্কারগুলোর রং জ্বলে যেতে থাকে এবং একসময় সেগুলো আবর্জনায় পরিণত হয়, ’ রয়টার্সকে বলছিলেন ৫৬ বছর বয়সি কমলাবেন। সংসারে চারজন সন্তান রয়েছে তার এবং গোটা পরিবার তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

তবে চলতি বছরের গ্রীষ্মে তিনি খানিকটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত। কারণ, গুজরাটের রাজ্য সরকার কিছুদিন আগে মাঝারি ও ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ‘তাপ বিমা’ নামের একটি সহায়তা প্রকল্প চালু করেছে এবং এরইমধ্যে এই বিমা সুবিধা গ্রহণের জন্য নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন গুজরাটের প্রায় ২১ হাজার নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী।

এই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা যদি স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠে এবং তা যদি ৩ দিন স্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে বিমাকারীরা কিছু পরিমাণে আর্থিক সহায়তা পাবেন।

অর্থনীতির ভাষায় এ ধরনের বিমাকে বলা হয় ‘প্যারামেট্রিক বিমা’। এমনিতে সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে বিমার আর্থিক সুবিধা পেতে হলে যার বা যে জিনিসের ওপর বিমা করা হয়েছে- সেই ব্যক্তি বা বিমাকৃত সেই জিনিসের ক্ষয়ক্ষতির সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হয়; কিন্তু প্যারামেট্রিক বিমার ক্ষেত্রে এই সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে অকল্পনীয় গতিতে বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি তাপপ্রবাহ, খরা, ঝড়, অতিবৃষ্টি, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ; আর এসবের সরাসরি শিকার হচ্ছেন সমাজের মাঝারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের পেশাজীবীরা। গত কয়েক বছর ধরে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি মাঝারি ও নিম্ন আয়ের মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।

সমাজের এই স্থরের লোকজনদের দুর্যোগকালীন আর্থিক সহায়তা দিতে তাই সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু হচ্ছে এই প্যারামেট্রিক বিমা সুবিধা।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ভারত

চলতি বছর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ভারতে শুরু হয়েছে এই প্যারামেট্রিক বিমা প্রকল্প, যা সাধারণভাবে পরিচিতি পেয়েছে ‘তাপ বিমা’ নামে। আরশত-রক ফাউন্ডেশন রিসাইলেন্স সেন্টার নামের একটি অলাভজন এনজিও সংস্থা, মাইক্রো ইনস্যুরেন্স স্টার্ট আপ সংস্থা ব্লু মার্বেল, আইসিআইসি ব্যাংক ও একটি ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ পরিচালনায় প্রাথমিকভাবে গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে এই প্রকল্প চালু করেছে। পরে দেশের অন্যান্য রাজ্যেও এই বিমা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রকল্প পরিচালকদের।

আরশত-রক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ক্যাথি বাগম্যান ম্যাকলেওড রয়টার্সকে বলেন, ‘এই বিমার সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হলো- এটা খুবই সহজ এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর সুবিধা পাওয়া যায়।’