ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জলবায়ু পরিবর্তন

পেশা নিয়ে সংকটে ইতালির জেলেরা

পেশা নিয়ে সংকটে ইতালির জেলেরা

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় একাধিক পেশা সংকটের মুখে পড়ছে। ইতালির ক্ল্যাম্প সংগ্রহকারীরাও পরিস্থিতির অবনতি টের পাচ্ছেন। নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা পরিবেশের সুরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সকাল ৭টার সময় গোরোতে কনকনে ঠান্ডা। ঘন কুয়াশা পোডেল্টার বন্দর প্রায় ঢেকে দিয়েছে। ফলে, ভাদিস পেসান্টির জন্য সমুদ্রে পাড়ি দেয়া আরো কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, বার বার নির্দিষ্ট কিছু স্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এমন এক সকালে এত ঘন কুয়াশার কারণে দিক নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন। আমরা এই কুয়াশাকে ‘কালিগা’ বলি।

ভাদিসের বাবাও অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে জাল ফেলতেন। তবে, ভাদিস এখন শুধু ‘ক্ল্যাম’ ঝিনুক ধরেন। কোথায় কতটা ধরা হবে, সেটা দৈনিক ভিত্তিতে স্থির করে দেয়া হয়। ভাদিস বলেন, সন্ধ্যাবেলায় আমরা সমবায় থেকে একটা বার্তা পাই। তাতে বলা হয় আগামীকাল অমুক জোনে মাছ ধরা হবে। ঠিক কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে, তারও উল্লেখ থাকে। কত পরিমাণ আমরা ধরে আনতে পারব, তাও স্থির করে দেয়া হয়। উপহ্রদের শান্ত পরিবেশে প্রায় আধ ঘণ্টা এগোনোর পর আচমকা শব্দ বেড়ে গেল। ভূতের মতো ক্ল্যাম শিকারিরা কুয়াশার মধ্য থেকে বেরিয়ে পড়লেন। গোরো উপহ্রদে প্রায় দেড় হাজার নারীপুরুষ এই কাজ করেন। শেষ পর্যন্ত ভাদিস-ও তার ক্ল্যাম ধরার এলাকায় পৌঁছে গেলেন। পানি গভীর না হলেও বেশ শীতল। কমপ্রেসড এয়ার রেকের সাহায্যে তারা বালুর ওপর থেকে ক্ল্যাম সংগ্রহ করেন। উপহ্রদের পানির তাপমাত্রা প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে ঠিক যেমনটা হওয়া উচিত। কিন্তু গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা লাগাতার ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সেখানেও হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে।

এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ভাদিস পেসান্টি বলেন, যেমন সমুদ্রের স্তরে পরিবর্তন ঘটলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা টের পাই। অথবা শিরোকো বাতাস বইলে বা চাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ের সময়ে তা বোঝা যায়। আমাদের এখানে আগে কখনো দেখা যায়নি, এমন মাছ, ক্ল্যাম বা কাঁকড়া দেখলেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে পারি।

সে কারণে ক্ল্যাম চাষ আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে ভাদিস মনে করছেন। তার মতে, সেটা জলবায়ুর জন্য ভালো। তিনি বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বা চুনাপাথর দিয়ে খোল তৈরি, যা আবদ্ধ কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়া আর কিছুই নয়। ফারেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোফেসর এলেনা টাম্বুরিনি জলবায়ুর জন্য ক্ল্যাম্পের গুরুত্ব সংক্রান্ত এক গবেষণা চালিয়েছেন। তিনিও গোরোর জেলেদের তত্ত্ব সঠিক হিসেবে মনে করেন। প্রো. টাম্বুরিনি বলেন, বেড়ে ওঠার সময় এই নরম প্রাণীগুলো খোলস তৈরি করে, যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড আবদ্ধ করে। এক কিলো ক্ল্যাম্প নিলে মনে রাখতে হবে, বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য যে সিওটু নির্গমন করা হয়েছে, তার মাত্রা কিন্তু বেড়ে ওঠা ক্ল্যাম্পের খোলসে বন্দি গ্যাসের মাত্রার তুলনায় অনেক কম। সেটাই এ ক্ষেত্রে বিস্ময়কর ঘটনা। উপহ্রদে প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গোরোর জেলেরা প্রায় এক ডজন প্রজাতির এই নরম প্রাণী চাষ করছেন। প্রায় ৭ বছর আগে ভাদিস ও তার সহযোগীরা আরো একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প শুরু করেন।

জোয়ারের টান কাজে লাগিয়ে তারা ভূমধ্যসাগরে অয়েস্টার সংগ্রহ করছেন। ভাদিস পেসান্টি বলেন, গোটা ইতালিতে একমাত্র আমাদের এখানেই অয়েস্টার উৎপাদন হয়। এখন চূড়ান্ত ভাটার সময় চলছে এবং কচি অয়েস্টার-ভরা এই ঝুড়িগুলো শূন্যে ভাসছে ও রোদ পাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত