মার্কিন ডলারের তীব্র সংকটের কারণে প্রতিবেশী দেশ ইরান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তান-ইরান সীমান্তে সশস্ত্র জঙ্গিদের হামলার কারণে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি শঙ্কায় পড়ে গেছে। জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিকেই এশিয়া গত ২৯ মে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ২১ মে ইরানের সারাভান শহরে জঙ্গিদের হামলায় দেশটির সীমান্ত বাহিনীর পাঁচ সেনা নিহত হন। এই শহরটি পাকিস্তানের সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গত ১৮ মে একটি সীমান্তবর্তী গ্রামে মিলিত হন। সেখানে ইরানের তৈরি ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন উদ্বোধন করেন তারা। এই লাইনের মাধ্যমে পাকিস্তানের দক্ষিণের বন্দর নগরী গাদারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তারা লাইনটি উদ্বোধন করার দুই দিন পরই ইরানের সীমান্ত বাহিনীর পাঁচ সেনা প্রাণ হারান।
এ হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসলামাবাদের সঙ্গে তেহরানের যে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে সেটিকে নষ্ট করতে এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।
সশস্ত্রগোষ্ঠী জস উল-আদল এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ইরানে সুন্নি মুসল্লিদের ওপর অত্যাচার চালানোর কারণে তারা সীমান্ত বাহিনীর সেনাদের হত্যা করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক মিডেল ইস্ট ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অ্যালেক্স ভাটানকা বলেছেন, ‘ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে জ্বালানি শক্তি চুক্তির ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে এই হামলা।’
যেখানে নিরাপদ পরিবেশ নেই সেখানে আপনি অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরেই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম সামলাতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। সীমান্তে হামলার আগে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে একটি গ্যাস ও তেল উৎপাদন কেন্দ্রেও হামলা হয়। এতে চারজন বেসামরিক ও দুইজন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন।
কিন্তু ইরান সীমান্তে এমন সময় হামলার ঘটনা ঘটল, যখন পাকিস্তান ডলার সংকটসহ অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে, যা দিয়ে শুধুমাত্র এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এছাড়া এই মে মাসে এখনো দেশটির ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ বাকি রয়ে গেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারে ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থও পায়নি পাকিস্তান।
পাকিস্তান ইরানের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে- কারণ এতে স্থানীয় মুদ্রায় বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে পারবে তারা।
পোল্যান্ডভিত্তিক যুদ্ধবিষয়ক সংস্থা ওয়ার স্টাডিস অ্যাকাডেমির গবেষক পিজমেসলো লেসেনস্কি জানিয়েছেন, গত ২১ মে সীমান্তে যে ঘটনা ঘটেছে, যদি এমনটি চলতে থাকে তাহলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে।
এছাড়া ইরানের কাছ থেকে তেলও কিনতে চায় পাকিস্তান। কিন্তু তেহরানের কাছ থেকে জ্বালানি কিনতে হলে ইসলামাবাদকে আগে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেত পেতে হবে। নয়ত তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।