ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মণিপুরে ফের সহিংসতা

রাতভর গোলাগুলি, অগ্নিসংযোগ
মণিপুরে ফের সহিংসতা

ভারতের জাতিগত দাঙ্গা কবলিত উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের বিষ্ণুপর ও চূড়াচাঁদপুর জেলার দুটি এলাকায় রাত থেকে সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে বলে জানা গেছে। গত শুক্রবার উত্তেজিত জনতা পুলিশের সাঁজোয়া যান ভাংচুর করেছে ও বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস, র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) ও মণিপুর রাজ্য পুলিশের যৌথ বাহিনী এদিন মধ্যরাত পর্যন্ত ইম্ফলের পূর্ব জেলায় ‘ফ্ল্যাগ মার্চ’ করে। সন্ধ্যায় ইম্ফলে প্রায় হাজার খানেক উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। তারা অ্যাডভান্স হাসপাতালের কাছে প্যালেস কম্পাউন্ডে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। আরএএফ কাঁদুনে গ্যাস ও রবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে, এত দুই বেসামরিক আহত হন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়েছে বলে খবর আসে। স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে থংজুর কাছে ২০০ থেকে ৩০০ লোক জড়ো হয়, তারা স্থানীয় এমএলএ-র বাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। আরএএফ এর একটি দল গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একই রাতে ইম্ফলের পশ্চিম জেলায় আরেকদল জনতা ইরিংবাম থানার অস্ত্রাগারে হামলা চালায়। ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ৩০০ থেকে ৪০০ লোক থানাটি তছনছ করে। পরে এদেরও ছত্রভঙ্গ করে আরএএফ। সেনাবাহিনীর কয়েকজন এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, মধ্যরাতের পর সিনজেমাইতে বিজেপি কার্যালয়ের আশপাশে জড়ো হয় ২০০ থেকে ৩০০ জন লোক, কিন্তু তারা কিছু করার আগেই সেনাবাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মধ্যরাতে পশ্চিম ইম্ফলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি অধিকারীমায়ুন শারদা দেবীর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করে উচ্ছৃঙ্খল জনতা, কিন্তু সেনাবাহিনী ও আরএএফ তা প্রতিরোধ করে। এরপর জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বলে সেনাবাহিনীর লোকজন জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ইম্ফলে কারফিউয়ের মধ্যেই ভারতের মোদী সরকারের প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রাজন সিংয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে সেটি পেট্রল বোমা মেরে জ্বালিয়ে দেয় হাজারেরও বেশি উত্তেজিত জনতার একটি দল। তার পরদিন শুক্রবার মণিপুরে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। মণিপুরের শাসক ১৯৪৯ সালে ভারতের যুক্তরাজ্য ব্যবস্থায় যোগ দেওয়ার পর থেকে রাজ্যটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। কিন্তু গত মাসে শুরু হওয়া জাতিগত দাঙ্গা ও সহিংস পরিস্থিতি গত কয়েক বছরের মধ্যে সেখানে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। মণিপুরের ৩৬ লাখ জনগোষ্ঠীর ৫৩ শতাংশই মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য, যারা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দু সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত। এদের অধিকাংশেরই বসবাস ইম্ফল উপত্যকায়। রাজ্যটির বাকি ৪৭ শতাং জনগোষ্ঠীর মধ্যে কুকি ও নাগারা প্রধান, তারা পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা। মূলত বিভিন্ন আইনি অধিকার নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের সঙ্গে নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের সহিংসতা ও দাঙ্গা চলছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান অস্থিরতার মধ্যে এ পর্যন্ত অনেকগুলো দাঙ্গার ঘটনায় এরইমধ্যে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে রাজ্যটির রাজনৈতিক নেতাদের সম্পত্তি লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত