ইউক্রেনজুড়ে ফুলের সুবাসের বদলে লাশের গন্ধ

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

দুই সপ্তাহ আগে রাশিয়ার ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেন। ১ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত সম্মুখ রণাঙ্গনের বিভিন্ন অংশে আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেন অল্প এগোলেও অগ্রগতি ধরে রাখতে পারছে। অন্যদিকে রাশিয়াও পিছু হটছে না। যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি লড়াই দেখে সে বিষয়ে লিখেছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সংবাদদাতারা। তারা দেখেছেন, চারদিকে ফুটে থাকা গোলাপের মাঝেও লাশের গন্ধ। ইউক্রেন বাহিনী শত্রু পক্ষের দুর্বলতা খোঁজার লক্ষ্য নিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বাহিনীর বেশিরভাগ সৈন্যকে সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছে, যাতে রুশ প্রতিরক্ষা ভাঙার বড় একটা সুযোগ পেলেই তারা মূল আক্রমণটা চালাতে পারে এবং দেশের দক্ষিণে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ভূখণ্ড আবার দখল করতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রণাঙ্গনে যুদ্ধরত ৬৮ নম্বর জেগার ব্রিগেডের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ দেয় দুই পক্ষের মুখোমুখি লড়াই দেখতে। সেখানে সম্প্রতি পুনর্দখল করা ব্লাহোদাত্নে গ্রাম থেকে আরো পূর্ব দিকে তাদের নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করার জন্য লড়ছে ইউক্রেন সেনারা। তাদের আক্রমণের লক্ষ্য কাছেই একটি পাহাড়ের মাথায় রুশ সৈন্যদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য তৈরি পরপর কিছু পরিখা। ইউক্রেন সেনারা হামলা চালাচ্ছে তিনটি পয়েন্টে- বাখমুতে, যেখানে তারা শহরের উত্তর এবং দক্ষিণ মুখে এগোচ্ছে। দুটি অংশেই রাশিয়া বেশ দৃঢ়ভাবে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে; জাপোরিঝিয়ার দক্ষিণে এবং দক্ষিণ দোনেৎস্কে, যেখানে বেশ কয়েকটি গ্রাম ইউক্রেন পুনর্দখল করেছে। এখানে লড়াই হচ্ছে একদম সামনাসামনি। সারা গ্রামজুড়ে গোলাপ ফুল ফুটে আছে। কিন্তু সর্বত্র বাতাসে শুধু লাশের গন্ধ। ফুলের সুগন্ধ ছাপিয়ে সেই ঘ্রাণ সর্বক্ষণ নাকে এসে লাগে। যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শনে যাওয়া সাংবাদিক কোয়েন্টিন সমারভিল বলেন, আমি মার্চ মাসে এই এলাকায় এসেছিলাম। তখন দেখেছিলাম কয়েক মাসের মধ্যে রণক্ষেত্র কয়েক মিটারও এগোয়নি। লড়াই হচ্ছে স্বল্প এলাকার মধ্যে। তবে, ইউক্রেনের জন্য পাল্টা আক্রমণ চালানো বেশ কঠিন কারণ ইউক্রেনের জন্য আকাশ পথে লড়াই করার সক্ষমতার অভাব রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে এফ ১৬ জঙ্গি বিমান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এ বছর শেষের আগে সেগুলো ইউক্রেনে পৌঁছচ্ছে না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি যখন ৩ জুন ঘোষণা করেছিলেন, ইউক্রেন পাল্টা হামলা চালানোর জন্য তৈরি, তখন তিনি আকাশ পথে লড়াইয়ে রাশিয়ার অধিকতর সক্ষমতার কথা বলেছিলেন এবং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে এই আক্রমণে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রাণ যাবে। ৬৮তম সেনা বিগ্রেডে ঠিক সেটাই ঘটল। দেখলাম চেরি ফলের গাছ দেখে গাড়ি থেকে নেমে গেছে। গাছগুলোর ঘন পাতায় ছাওয়া ডালপালার আড়াল থেকে মুঠো মুঠো টুকটুকে লাল চেরি পেড়েছেন সৈনিকরা। হাতভর্তি চেরি ফল নিয়ে শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে আর হাসিতে মেতে উঠেছেন ওরা। পেছনের পাহাড় থেকে তখন ভেসে আসছে রুশ অবস্থানের ওপর ইউক্রেনীয়দের মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ আর মর্টারের আওয়াজ।