ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কিশোর নাহেল হত্যা

নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্সের পরিস্থিতি

নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্সের পরিস্থিতি

ফ্রান্সের প্যারিসের উপকণ্ঠে নঁতেয়ায় পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের কিশোর নাহেল নিহত হওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া দাঙ্গা, সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন শহরের মেয়ররা সহিংসতাবিরোধী সমাবেশ ডাকার পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে। এদিকে কিশোরের দাদিও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। পাঁচ দিনের সহিংস বিক্ষোভের পর ফ্রান্সে দাঙ্গা শান্ত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

গত রোববার শেয়ার করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, দেশটির মেয়রদের একটি অ্যাসোসিয়েশন উল্লেখ করেছে ‘আমরা আমাদের দেশকে বিশৃঙ্খলার শিকার হতে দিতে চাই না।’

দাঙ্গা, সহিংসতার ঘটনায় রোববার রাতে ১৫০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। আগের রাতে ৭০০ জনের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। সংকট মোকাবিলার জন্য প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রতিবেশী জার্মানিতে রাষ্ট্রীয় সফর স্থগিত করেছেন। আজ ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ২২০ টাউনশিপের মেয়রদের সঙ্গে ও পার্লামেন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

নিহত কিশোরের দাদি বলেছেন, তিনি চান তার নাতির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ফ্রান্সজুড়ে চলা দাঙ্গা বন্ধ হোক।

টানা ষষ্ঠ রাতজুড়েও অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে, এমন শঙ্কা বিরাজ করার কারণে রোববার রাতেও ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেগাল্ড দাগমানা। দাঙ্গাকারীরা রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বহু গাড়ি পুড়িয়েছে, দোকানপাট লুটপাট করার পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তারা নগরীর টাউন হল ও পুলিশ স্টেশনগুলোকে লক্ষ্যস্থল করেছে, হামলা চালিয়েছে প্যারিসের শহরতলির এক মেয়রের বাড়িতে যখন তার স্ত্রী ও সন্তানরা ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন।

কিন্তু অস্থিরতা থেমে গেছে এটি বলার মতো সময় এখনো হয়নি বলে সতর্ক করেছেন কর্মকর্তারা। প্যারিসের পুলিশ প্রধান লোরাঁ নুনিয়েজ বলেছেন, ‘স্পষ্টতই ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে, কিন্তু আসছে দিনগুলোতেও আমরা সক্রিয় থাকব। আমরা খুব সজাগ আছি, কেউই জয় দাবি করছে না।’

নাহেলের দাদি (যাকে ফরাসি গণমাধ্যম নাদিয়া নামে শনাক্ত করেছে) বলেছেন, দাঙ্গাকারীরা তার নাতির মৃত্যুকে ধ্বংস করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে আর তাদের পরিবার শান্তি চায়। ‘আমি তাদের থামতে বলছি,’ বিএফএম টেলিভিশনকে বলেছেন তিনি। নাহেল মারা গেছে। আমার মেয়ের ক্ষতি হয়েছে, তার জীবন শেষ।’

ইচ্ছাকৃতভাবে নাহেলকে গুলি করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার জন্য গণ-অর্থায়নের আহ্বানে ৬ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি ইউরোর প্রতিশ্রুতি মেলা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নাদিয়া বলেন, ‘আমার হৃদয়ে বেদনা হচ্ছে।’

গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে প্যারিসের নঁতেয়ার একটি ট্র্যাফিক সিগন্যালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১৭ বছর বয়সি কিশোর নাহেল এম। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সহিংস দাঙ্গায় রূপ নেয়ায় প্রায় ছয় দিন ধরে ফ্রান্স অস্থির হয়ে আছে।

২০১৮ সালে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন ফ্রান্সের অধিকাংশ অংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর এবারের দাঙ্গাই মাখোঁকে সবচেয়ে বড় ধরনের সংকটে ফেলেছে। রোববার দিবাগত রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর মার্সেইতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এখানে অনেক রাত পর্যন্ত দাঙ্গাবাজ তরুণদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে। এর পাশাপাশি প্যারিস, দক্ষিণ ফ্রান্সের রিভিয়েরা অঞ্চলের শহর নিস এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর স্তাসবুর্গেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত