ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আফগানিস্তানিদের সামনে আরো কঠিন বিপদ

আফগানিস্তানিদের সামনে আরো কঠিন বিপদ

আফগানিস্তানে প্রতিবছর দেওয়া অনুদানের বড় অংশ বন্ধ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডাসহ বিশ্বের যেসব দেশ নিয়ম করে আফগানিস্তানে বিশাল অঙ্কের অনুদান দিত, তারা সেটিতে কাটছাঁট করেছে। এর ফলে তালেবানের শাসনে থাকা দেশটি ব্যাপক অনাহার এবং ওষুধ সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে। আফগানিস্তানের বিষয়ে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামত ও তথ্য বিশ্লেষণের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভয়েস অব আমেরিকা। সেখানেই এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের লাখ লাখ লোক আগামী শীতে কোনো খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা আশ্রয় নাও পেতে পারে। কারণ দেশটিতে অর্থায়নের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। নরওয়ের শরণার্থী পরিষদের মহাসচিব জ্যাঁ এগল্যান্ড জানান, এই শীতে আফগানিস্তানে লাখ লাখ ক্ষুধার্ত নারী ও শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আফগানিস্তানের আনুমানিক ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত দেড় কোটি মানুষের জন্য তীব্রভাবে খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি আগস্ট মাসে মাত্র ৫০ লাখ মানুষকে সহায়তা দিতে পেরেছে। এছাড়া, আগামী মাসগুলোতে জীবন রক্ষাকারী ওষুধও শেষ হয়ে যেতে পারে। এগল্যান্ড বলেন, অর্থায়নের ঘাটতি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। কারণ ত্রাণ সংস্থাগুলোই সারা দেশের হাসপাতালে ওষুধ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকরণ দান করে থাকে। জুন মাসে ২৬০টির বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এর ফলে ২০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, চলতি অর্থায়ন সংকটের যদি সমাধান না হয়, তবে ৩৭ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় ও জীবন দায়ী স্বাস্থ্য সহায়তা পাওয়ার সুযোগ হারাবেন। এই বছর আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তার জন্য ৩২৬ কোটি ডলার অর্থায়নের আবেদন করেছিল জাতিসংঘ। কিন্তু, ৮ আগস্ট পর্যন্ত দাতারা মাত্র ৮০ কোটি ডলার (আবেদন করা অর্থের ২৫ শতাংশেরও কম) দিয়েছে। জাতিসংঘের আবেদনে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই বছর ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার দিয়েছে। এই অঙ্ক, ২০২৩ সালে অনুদানের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে গত বছর ওয়াশিংটনের দেয়া ১২০ কোটি ডলারের তুলনায় এ বছরের অনুদানের এ পরিমাণ অনেক কম। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও কানাডা তাদের অনুদানের পরিমাণ হ্রাস করেছে। যুক্তরাজ্য তাদের অনুদান গত বছরের ৪৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার থেকে কমিয়ে ৪৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার করেছে। জার্মানি ১০ কোটি ৬০ লাখ ডলার থেকে কমিয়ে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং কানাডা ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাগ্রহণের কারণে পশ্চিমারা অনুদান কমিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এতে তালেবান প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করারও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সাহায্য সংস্থাগুলোর কর্মীদের বিশেষ করে নারীদের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা এতে প্রভাব ফেলেছে। তবে সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান। মানবিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ অস্বীকার করে তালেবান কর্মকর্তারা পশ্চিমা দাতাদের মানবিক সহায়তার রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন। তালেবানের একজন মুখপাত্র সুহেল শাহীন বলেন, ‘আমরা কখনোই সাহায্য কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করিনি, কিন্তু একজন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমরা পরামর্শ দিয়েছি, যে সাহায্য সবচেয়ে যোগ্য ও অভাবী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক।’

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট পশ্চিমাদের ভাবনার চেয়েও দ্রুতগতিতে কাবুলের দখল নেয় তালেবান। এরপর তারা অনেকটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এখনও কোনো দেশই তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। গুটিকয়েক দেশ ছাড়া বেশিরভাগ দেশই তালেবান কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে আফগানিস্তানে বিভিন্ন সাহায্য কর্মসূচি পরিচালনার জন্য অর্থায়ন করে।

বিশ্বের বিভিন্ন অংশে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘ এ বছর ৪৩টি মানবিক আবেদন করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত