ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছাড়া শুরু করেছে জাপান

শোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছাড়া শুরু করেছে জাপান

বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছাড়া শুরু করেছে জাপান। আর এ কাজের জন্য আবহাওয়া ও সমুদ্রের অবস্থা উপযোগী বলে ঘোষণা দিয়েছে প্ল্যান্ট অপারেটর টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)। এরপর স্থানীয় সময় দুপুর ১টার পরেই প্রশান্ত মহাসাগরে পানি ছাড়া শুরু হয়। সম্পূর্ণ নিষ্কাশন প্রক্রিয়া ৪০ বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে টেপকো কর্মকর্তা বলেছেন, এখন সমুদ্রের পানি পরিবহণকারী পাম্পগুলোর কাছাকাছি ভালভগুলো খুলছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) থেকে যারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন তারা এই নিঃসরণের সময় সাইটে থাকবেন। তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়ার পর পানি ও মাছের নমুনা সংগ্রহ করবেন তারা। জাপান বলেছে, ট্রিটিয়াম ছাড়া সমস্ত তেজস্ক্রিয় উপাদান ফিল্টার করা হয়েছে। বাকি উপাদান পানি থেকে অপসারণ করা কঠিন। কোম্পানিটি ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত চার ধাপে শোধিত পানি সমুদ্রে ছাড়ার কাজ পরিচালনা করবে। প্রতিবার ৭ হাজার ৮০০ ঘনমিটার পানি ছেড়ে দেওয়া হবে। যে পরিমাণ পানি প্রথমে ছাড়া হচ্ছে তা শেষ হতে প্রায় ১৭ দিন লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাপানের এ কাজে জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ’র সমর্থন থাকলেও এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জুলাই মাসে প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নগণ্য। এদিকে পানি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর, চীন এই পরিকল্পনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে। জাপানকে ‘অত্যন্ত স্বার্থপর’ বলে অভিযুক্ত করেছে দেশটি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সমুদ্র সমগ্র মানবজাতির সাধারণ সম্পত্তি। জোরপূর্বক ফুকুশিমার পারমাণবিক বর্জ্য সমুদ্রে নিঃসরণ করা একটি অত্যন্ত স্বার্থপর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এটি আন্তর্জাতিক জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে।’ দেশটির শুল্ক কর্তৃপক্ষ জাপান থেকে সমস্ত জলজ পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। এদিকে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত দিকগুলো দক্ষিণ কোরিয়া মেনে নিলেও জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াও ফুকুশিমা থেকে মাছ এবং খাদ্যপণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। তারা বলেছে জনসাধারণের উদ্বেগ না কমা পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে। স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল মোমবাতি জ্বালিয়ে সমুদ্রে পানি ছাড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বৃহস্পতিবার সিউলে বিক্ষোভ করেছে। দেশটির জাপানি দূতাবাসের ভবনে প্রবেশের পর রাজধানীতে অন্তত ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তরুণদের নিয়ে গঠিত এই দলটি অষ্টম তলায় দূতাবাসে পৌঁছে গিয়েছিল। তারা সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়ার নিন্দা জানিয়ে ব্যানারও ঝুলিয়েছে। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘সমুদ্র জাপানের ময়লার ঝুড়ি নয়, দূষিত পানি ছাড়া বন্ধ করুন।’

৯ মাত্রার ভূমিকম্পে জাপানের ফুকুশিমা প্ল্যান্টটি ২০১১ সালের মার্চ মাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে উত্তর-পূর্ব জাপানের প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিলের পর এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিপর্যয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত