লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যা

এক হাজারের বেশি মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় এক হাজারের বেশি মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের তাণ্ডবে সৃষ্ট বন্যায় দেশটির পূর্বাঞ্চলে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। অবশ্য বন্যায় মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেরনায় বন্যার ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের একজন মন্ত্রী মঙ্গলবার জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিহতের সামগ্রিক সংখ্যা ঠিক কত তা এখনই জানা সম্ভব নয়, তবে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী এবং জরুরি কমিটির সদস্য হিচেম চকিউয়াত ফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি দেরনা থেকে ফিরে এসেছি। সেখানে অবস্থা খুবই বিপর্যয়কর। মৃতদেহ সর্বত্র পড়ে আছে - সমুদ্রে, উপত্যকায়, ভবনের নিচে।’

তিনি বলেন, দেরনায় উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। তার আশঙ্কা, বন্যায় প্রাণহানির চূড়ান্ত সংখ্যা ‘সত্যিই, সত্যিই বড়’ হবে। তার ভাষায়, আমি অতিরঞ্জিত করে কিছু বলছি না। বন্যায় শহরের ২৫ শতাংশ এলাকা অদৃশ্য হয়ে গেছে। অনেক, অনেক ভবন ধসে গেছে। এদিকে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের তাণ্ডবে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়ের আঘাতে দেশটির উপকূলীয় শহরগুলোর শত শত বাড়ি উড়ে গেছে। এছাড়া দুটি পুরোনো বাঁধ ভেঙে গিয়ে দেরনা শহরে ভয়াবহ ওই বন্যা দেখা দেয়। লিবিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের মুখপাত্র আহমেদ এল-মোসমারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র দেরনাতেই মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, সেখানে ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ নিখোঁজ আছেন। মূলত সেখানে পুরোনো দুটি বাঁধ ভেঙে গিয়ে এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক মালিক ত্রাইনা লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে বলেছেন, দেরনা শহরটি পুরোপুরি পাহাড় ঘেরা, আর সেখানে এই বাঁধগুলো ধসে পড়েছে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, শহরটিতে ৩০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি গড়িয়ে গেছে। আর আমরা দেখছি পুরো শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। গত রোববার লিবিয়ায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। তারপর দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করতে গিয়ে দেশটির সাতজন সেনা নিখোঁজ হন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, দেরনার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিও ও ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পুরো শহরে পানি। বহু মানুষ গাড়ির ছাদে বসে সাহায়্য চাইছেন। তাদের গাড়ি তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।

লিবিয়ায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি গ্যাগনন বলেছেন, প্রচুর শহর ও গ্রাম বিপর্যস্ত হয়েছে। বন্যা হয়েছে। অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে।

প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। এই পরিস্থিতিতে ত্রিপোলিতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত সরকার ত্রাণের আবেদন জানিয়েছে। তিন সদস্যের প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা সব বন্ধু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনকে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। গত সোমবার সকালে তুরস্ক তিনটি বিমানে করে দেশটিতে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। আমিরাতের প্রেসিডেন্টও জানিয়েছেন, তারাও উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছেন।