ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফের অনিশ্চয়তা ও ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে বিশ্ব

ফের অনিশ্চয়তা ও ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে বিশ্ব

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ২০১৯ সালে প্রথমবার বৈঠক হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের। বুলেটপ্রুফ বিশেষ সজ্জিত ট্রেনে ভ্লাদিভোস্ত শহরে যান উন। ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুই দিনব্যাপী সেই সফর আনন্দঘন সময় পার করেন উন। সেই সফরের উদ্দেশ্য হিসেবে পুতিন জানিয়েছিলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের স্থবির সম্পর্ককে নতুন গতি দিতে এই বৈঠক। চার বছর পর ফের রাশিয়ায় মিলিত হচ্ছেন এই দুই নেতা। তবে এবারের উদ্দেশ্য অনেকটা সামরিক স্বার্থ যেখানে গুরুত্ব পাবে অস্ত্র বিক্রিসহ পরমাণুবিষয়ক প্রযুক্তি বিনিময়।

এই সফরের বিষয়ে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেখা এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইনবাম চুন সতর্ক করে বলেন, একটি নতুন এবং ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। এই সফরে পুতিন অস্ত্র পাবেন। অন্যদিকে, পারমাণুবিক অস্ত্রকে আরো উন্নত করতে উত্তর কোরিয়া পাবে প্রযুক্তিগত সহায়তা।

এই দুই সফরের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন এসেছে তা হলো ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ সামরিক অভিযান যা শুরু হয়েছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। মস্কো ধারণা করেছিল দ্রুত এই সংঘাত শেষ হয়ে যাবে কিন্তু সেই যুদ্ধ এখন গড়িয়েছে ১৮ মাসে। ২০১৯ সালের তুলনায় রাশিয়া শুধু বিশ্বরাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে নয় এবার মস্কো নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েছে। সিউলের হানকুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ম্যাজন রিচে জানিয়েছেন, এই যুদ্ধ পারস্পরিক শক্তি ক্ষয়ের জন্য দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রয়েল ইউনাটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া এক কোটি ২০ লাখ গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে। চলতি বছর ব্যবহার করবে প্রায় ৭০ লাখ। রাশিয়ার সমরাস্ত্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জানিয়েছেন, বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাশিয়া মিত্র দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ পাচ্ছে না। এতে করে যুদ্ধে অতিপ্রয়োজনীয় গোলাবারুদের চাহিদা মেটাতে উত্তর কোরিয়ার দ্বারস্ত হবে মস্কো। অধ্যাপক ব্রস বেসটল জানিয়েছেন, কিমের কাছ থেকে রাশিয়া সম্ভবত আর্টিলারির গোলাবারুদ, রকেট লঞ্চার, একে-৪৭ এর মতো মাঝারি মাত্রার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চাইতে পারে।

উত্তর কোরিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ফর্মুলায় অস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী। এতে করে দুই দেশের সমরাস্ত্রে রয়েছে বিশেষ সাদৃশ্যতা। খাদ্যঘাটতি মোকাবিলায় উত্তর কোরিয়ার মানবিক সহায়তা পেতে পারে মস্কো থেকে। পিয়ংইয়ং পারমাণবিক অস্ত্রবহনকারী সাবমেরিনসহ স্যাটেলাইট ও সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার উন্নত প্রযুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করবে। ইউক্রেনের সঙ্গে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য প্রকৃত অর্থে ভালো কিছু নিয়ে আসেনি। এতে অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ খরচ হয়েছে মস্কোর। এ কারণে মস্কোকে ফের অস্ত্রের মজুত বাড়াতে হবে। এমনসব অস্ত্রের মজুত বাড়াতে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি হতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, রাশিয়া একা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে না। গত মঙ্গলবার সকালে ব্যক্তিগত ট্রেনে করে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। রাশিয়ার এক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জাপানের মিডিয়া আউটলেট জেএনএন জানিয়েছে, কিম জং উন রাশিয়ার খাসান সীমান্ত স্টেশনে পৌঁছেছেন। প্রাইমরস্কি ক্রাই এলাকায় অবস্থিত স্টেশনটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতাকে স্বাগত জানিয়ে একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মস্কোর সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্র চুক্তি না করার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সতর্কতার মধ্যেই কিম জং উন রাশিয়া সফরে গেলেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির একজন বিশ্লেষকের মতে, খাসান থেকে ভ্লাদিভোস্তকে পৌঁছাতে আরো পাঁচণ্ডছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত