সাউথ জার্সিতে চিহ্নিত জামায়াত শিবির বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের দাবি

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সাউথ জার্সি মেট্রো আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর আটলান্টিক সিটিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আবদুর রফিক। সভায় উপস্থিত বক্তারা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমরান ভূঁইয়ার সাম্প্রতিক আওয়ামী লীগবিরোধী কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এমরান ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ না করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান বক্তারা; যা বহিষ্কারতুল্য বলে সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় উল্লেখ করা হয়, একসময় আটলান্টিক সিটিতে বাংলদেশিরা সংখ্যায় কম থাকায় ছিল না কমিটি। তবে ওই সময়েও সংগঠনের নিয়মিত কর্মকাণ্ড চলত। ২০০৮ সালে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নির্বাচনে হেরে যাওয়া একটি গ্রুপ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা নিয়মিত এখানে জামায়াতে ইসলামীদের সাথে সব আওয়ামী লীগবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল। অতঃপর সেই লোকই কাউকে না জানিয়ে এমরান ভূঁইয়াকে নিয়ে নিউইয়র্কের এক ব্যবসায়ীর সুপারিশে আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে আসে। এতে সবাই বিক্ষুব্ধ হয়। পরবর্তীতে ডাকলেও জামায়াতে ইসলামীদের কমিটিতে না গিয়ে তারা নিজেরাই প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের নিয়ে কমিটি গঠন করে। কোনো অসুবিধা ছাড়াই এখনো কমিটির সব কাজকর্ম সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে, কমিটি গঠনের দিন অনুপ্রবেশকারী স্বেচ্ছায় শিবির সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করলে আগত নেতারা হতাশা প্রকাশ করেন। তখন তাকে ৭২নং শেষ সদস্য করা হয় শর্তসাপেক্ষে। তার লোকাল রাজনীতিতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কথা জানাতে বাদ পড়ার আশঙ্কায় সে শিবিরের কথা স্বীকার করে। প্রথমদিকে নানাভাবে সে বুঝাতে চেয়েছিল, সে জামায়াত ছেড়েছে। সবাই মিলে তখন আরবি শিক্ষালয় চালু করে সেও সম্পৃক্ত করে নিজেকে। নিজেদের সন্তানদের যাতে মৌলবাদের শিক্ষা থেকে বাঁচানো যায় এটাই ছিল লক্ষ্য। স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলাদা ঈদের জামায়াতেও সে যোগ দেয়। কিন্তু আস্তে আস্তে তার মুখোশ উন্মোচিত হতে থাকে। নতুন কমিটিকে সে জামায়াতি ভাবধারায় চালাতে সচেষ্ট হয়। এতে তখনকার সভাপতি ও সেক্রেটারির আসকারা পায়। যেহেতু ইতোমধ্যে আলাদা একটি সামাজিক সংগঠন তারা তৈরি করেছে, সেখানে একসঙ্গে কাজ করে তারা। আওয়ামী লীগকে সে যত্রতত্র ব্যবহার করতে চায়। সবার কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিলেও কোনো কারণ ছাড়াই কাউকে না জানিয়ে এমরানের সহযোগিতায় আরবি স্কুল বন্ধ করা হয়।

একই সঙ্গে বন্ধ করা হয় ঈদ উপলক্ষ্যে আলাদা স্বতঃস্ফূর্ত ঈদ জামায়াত।

আওয়ামী লীগের মিটিং এ দলাদলির কথা বলে সেখানে জামায়াত-বিএনপির লোকদের আনা হতো। কাউকে জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলতে বারণ করা হতো। যারা বলতে চাইত, আলোচনায় তাদের নাম রাখা হতো না। এতে দিন দিন প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা ক্ষিপ্ত হতে থাকে। একদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে স্থানীয় একটি হোটেলে আলোচনা সভায় ঘোষণা করা হয় একজন সহ-সভাপতির নাম। যে নাকি বক্তব্য দেবে। এর আগে সবাই তাকে আওয়ামী লীগবিরোধী বলেই চিনত। সে বক্তব্যের শুরুতে বলতে থাকে, সে সব জানে, জিয়া তার সম্মুখে পটিয়ায় ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। আলোচনা সভাটি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ছিল। এরপর সে অনর্গল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকে। সে বলে ‘বঙ্গবন্ধু দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন, জুলুম নির্যাতন চালিয়েছেন, তিনি আমাদের আত্মার অভিশাপ থেকে মারা গেছেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই তার ওপর ক্ষিপ্ত হলে এক অনুপ্রবেশকারী স্টেজে এসে তাকে বক্তব্য চালিয়ে যেতে বলে। পরে জবাব দেয়া হবে বলে। এতে সে সাহস পেয়ে বলে, আমি সুযোগ পেয়েছি সব বলব। এরই মধ্যে প্রায় সভায় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে। কিন্তু তারপর এটাকে ধাপাচাপা দিতে সচেষ্ট হয় অনুপ্রবেশকারী। ওই সময় থেকে দ্বিতীয় বিভক্তি শুরু হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি জিরাজ ভূঁইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গালি দেয়। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, নিজাম চৌধুরীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কারো চোখেই এটা বিরূপ মনে না হলেও জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশকারী পরের দিন সবাইকে ক্ষেভের সাথে এর নিন্দা জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। ডাকা হয় জরুরি সভা। সিরাজ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয় এই কথা বলার জন্য। এখানেই শেষ নয়, সবার উপস্থিতিতে ওনাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। কান্নারত অবস্থায় তিনি তার মামা এমরান ভূঁইয়ার সহয়তা চাইলে তিনি ক্ষমা চাইতে বলেন। ক্ষমা চেয়ে সে কান্নারত অবস্থায় বাড়ি যায। সেদিন বুঝা যায়নি এটা কী আওয়ামী লীগ, না জামায়াত।

এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি। বার বার জানানো হয়েছে। এমন কী সাংবাদিক সম্মেলন করায় তিনি আমাদের প্রতি বিরাগ ভাজন হয়েছেন। তিনি সামনা সামনি আমাদের পক্ষে দেখালেও অজ্ঞাত কারণে কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। এর মধ্যে ভোটের মাধ্যমে কমিটি করার কথায় সবাই সায় দিয়ে মেম্বার বানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। সর্বোচ্চ ৮০ জনের মতামতকে উপেক্ষা করে ৪০ জনের কম ভোটারকে প্রাধান্য দিয় পর দিন ১৮ জনের আজগুবি কমিটি করা হয়। যেখানে ড. সিদ্দিকুর রহমান নিজে বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব ভুলত্রুটি শুদ্ধ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে, যা আজ ৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ১৮ জনের কমিটিতে কে কোত্থেকে এলো কেউ জানে না। দুয়েকজন সমাজিকভাবে ঘৃণিত পদবি লিপ্সু থাকলেও ওই কমিটি এখন ভেঙ্গে চুরমার, কোনো কার্যক্রম নেই।। উল্লেখ্য, এমরান ভূঁইয়া প্রথম চোরা কমিটির কারণে অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে উপরে উপরে অবস্থান দেখিয়ে সেক্রেটারির পদবি বাগিয়ে নেয়। এটা যে অনুপ্রবেশকারীর ইচ্ছায় হয়েছে, তা সবার কাছে এখন পরিষ্কার। প্রকৃত আওয়ামী লীগার প্রায় সবাই বাদ। বাদ পড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা যিনি যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে সরাসরি এফবিআইএ অভিযোগ করার কারণে একই দিন একাধিক মিটিং স্থগিত করে মীর কাশেম আলীকে বাংলাদেশে যেতে বাধ্য হয়েছে। এটা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় হয়েছে। কিন্তু তাকে বাদ দেযা হলো কেন, কে কাকে জবাব দেবে। মনে হয় যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে যাওয়ার শাস্তি।

এরই মধ্যে এমরান সাহেব কমিটি আনার জন্য মরিয়া। বর্তমানে শেষ কমিটেতে কেউ আসে না। ১৮ জনের কমিটিতে নানা নাটক যুদ্ধ চলে ও চলছে। বহিষ্কারসহ মারামারি সব সেখানে। তারা আবার পদণ্ডপদবি দিতে বলে নতুন কমিটি আনার চেষ্টায় আছে। ঢুকানোর চেষ্টা করছে সাবেক শিবির নেতাকে। উল্লেখ্য, প্রথম চোরা কমিটির পর থেকে নানাভাবে আমাদের চেষ্টায় অনুপ্রবেশকারীকে আর কমিটিতে নাম রাখা হয়নি। সে কমিটিতে না থাকলেও যেসব নেতা হয়, তারা প্রায় সবাই নানাভাবে আসা তার লোক। ড. সিদ্দিকুর রহমানের পূর্ণ সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি শুধু মানুষের বিরোধিতায় সাবেক শিবির নেতাকে ঢুকানো যায়নি- অনেকেই তাই মনে করেন। এখন লক্ষ্য পর্দার অন্তরাল থেকে তাকে প্রকাশ্য কমিটিতে আনার চেষ্টা চলছে। এখন এমরান ভূঁইয়া সবার সাথে বেইমানি করে তাকে নিয়ে সবাইকে বাদ দিয়ে ভুয়া কমিটি আনতে চেষ্টা করছে বলে গুঞ্জন আছে।

কমিটির পদপদবি পেতে হাজার হাজার টাকা চাওয়ার কথা শুনা যায়। এখন বিরাট অংকের লেনদেনের কথা শোনা যাচ্ছে। লেনদেনের মাধ্যমে এমরান ভূঁইয়া এ কাজ করছেন বলে জানা যায়। সব কিছু জানানো হলেও ড. সিদ্দিকুর রহমান সাহেব অনুপ্রবেশকারীর জন্য দেশের প্রধান মন্ত্রির দপ্তর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের সুপারিশের কথা বলেন সব সময়। অভিযোগ তদন্ত যাচাই-বাছাই কোনো দিন হয়নি। এমন কী, একবার প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হন সাংবাদিক সৈয়দ শুকুর আলী। শুভ তখনকার রিপোর্টার্স ইউনিটির সেক্রেটারি ও সমকালের তখনকার সিনিয়ার রিপোর্টার ফাসিউ উদ্দিন মাহতাব যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অনুপ্রবেশকারীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ফোনে তিনি চট্টগ্রামের আমিনুর রহমান আমিন ভাইয়ের (কেন্দ্রীয় নেতা) সুপারিশের কথা বলে তার ব্যাপারে অপারগতার কথা জানান। তারা সাথে সাথে আমিনুল ইসলাম আমিন ভাইকে ফোন দিলে তিনি ক্ষোভের সাথে তা অস্বীকার করেন। তাকে জিজ্ঞেস করবে বলে জানান। এরই মধ্যে এমরান ভূইয়া ঐক্যের বাপারে কথা বলতে এসে বলেন, ‘শহীদ খান শিবির করে এটা সবাই জানে’। কমিট গঠনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্তৃক আমাদের ব্লাব দেয়া হয়েছে। ইত্যাদি। তার পরও সে আওয়ামী লীগকে শিবির নেতার হাতে তুলে দিতে তৎপর। এরপর আহুত সভায় উপস্থিত সবার এককথা শিবিরের অনুপ্রবেশকারীকে বাদ দিয়ে কমিটি করতে হবে। যেভাবে যে প্রক্রিয়ায় হয়, আমরা রাজি। বিশাল লেনদেনের মাধ্যমে যে কমিটে আনার চেষ্টা চলছে, সেই রকম কিছু অনুমোদন না দিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে অনুরোধ জানানো হয়।