হুতি কারা, কেন আলোচনায় তারা?

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে সামরিক হামলা চালিয়েছে। জাহাজে হামলায় সংশ্লিষ্ট হুতি নামক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে ‘বর্বর’ বলে আখ্যা দিয়েছে দেশ দুটি। হুতি হলো ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত একটি গোষ্ঠী। তাদের ভাষ্য, গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা, হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার জবাবেই জাহাজে তারা হামলা চালিয়েছে। গেল ডিসেম্বরে হুতির হামলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলো। বাণিজ্যিক সমুদ্রপথ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র বহুপাক্ষিক জোট গঠন করে। জোটে এখন ২০টির বেশি দেশ রয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। হুতি নামক গোষ্ঠীর এ ইয়েমেনি যোদ্ধা কারা, যারা এ উত্তেজনার কেন্দ্রে?

কারা হুতি : হুতিরা আনসার আল্লাহ (আল্লাহর সমর্থক) নামে পরিচিত। তাদের গোষ্ঠীটি সশস্ত্র, যেটি রাজধানী সানা এবং সৌদি আরবের কাছাকাছি পশ্চিম ও উত্তর অংশসহ ইয়েমেনের বেশিরভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ১৯৯০ এর দশকে হুতিদের উত্থান। ২০১৪ সালে ইয়েমেন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গোষ্ঠীটি নিজের অবস্থান জানান দেয়। হুতিরা ইরানের সমর্থনে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সঙ্গে লড়াই করে কয়েক বছর কাটিয়ে দিয়েছে। যুদ্ধরত দুই পক্ষ বারবার শান্তি আলোচনার চেষ্টাও করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শিয়া গোষ্ঠীটিকে ইরানের প্রক্সি হিসেবে দেখা উচিত নয়। এর নিজস্ব ভিত্তি আছে, নিজস্ব স্বার্থ আছে- এবং নিজস্ব লক্ষ্য রয়েছে।

ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি কী : হুতিদের নিয়ন্ত্রণে ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশ। দেশটি দশকজুড়ে গৃহযুদ্ধে ডুবে আছে। গোষ্ঠীটি সৌদি আরবের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রয়েছে। আর এডেনভিত্তিক ইয়েমেন সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি। ২০২২ সালে ইয়েমেনের নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট আবু-রাব্বু মানসুর হাদি ক্ষমতা হস্তান্তর করলে আল-আলিমি পদে বসেন। হাদির সঙ্গে হুতিদের সম্পর্ক ছিল সমস্যাপূর্ণ। ২০২৩ সালের মার্চে জাতিসংঘ ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট বলে আখ্যা দেয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী আনুমানিক ২১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ইয়েমেনের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের জরুরিভাবে মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষা সেবা প্রয়োজন। হুতি ও সামরিক কোয়ালিশনগুলোর মধ্যে লড়াই গেল বছর অনেকেটাই কমে আসে। ২০২৩ সালে ইয়েমেনি বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনী তিন দিনে ৮০০ বন্দি বিনিময় করে। ওমানের মধ্যস্থতায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে হুতিরা সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হয়েছে। সৌদি আরবও ২০২৩ সালে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে ইয়েমেনি শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা বাড়ছে।

লোহিত সাগরে জাহাজে কেন হুতিদের হামলা : হুতিরা বলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্ক থাকা বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজগুলোতে তারা হামলা চালিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলছে, গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে তেল আবিবের ওপর চাপ বাড়াতেই তাদের এ হামলা। ১৮ নভেম্বর গোষ্ঠীটি গ্যালাক্সি লিডার নামে একটি কার্গো জাহাজ দখল করে নেয়।

হুতির প্রধান নেগোশিয়েটর ও মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুলসালাম ডিসেম্বরে আলজাজিরাকে বলেন, আমাদের অভিযানগুলো গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে। এ আগ্রাসনের মুখে আমরা অলস দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার পর গেল বৃহস্পতিবার হুতিরা বলেছে, তারা ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা চালিয়ে যাবে। আবদুলসালাম অনলাইনে লেখেন, তারা যদি মনে করে যে, ফিলিস্তিন ও গাজার প্রতি সমর্থন থেকে ইয়েমেনকে বিরত রাখবে, তবে তারা ভুল। গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ইসরায়েল যেন অনুমতি দেয়, হুতিরা সেই দাবি করে আসছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, হামলাগুলো হুতিদের অন্যভাবে সাহায্য করছে। এসব হামলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় দেশের কাছ থেকে আসা পাল্টা জবাব অন্যান্য দেশ ও সরকারকে বাধ্য করছে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে, তাদের বৈধতা দিতে। গোষ্ঠীটি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে ইয়েমেনের সরকার হিসেবে স্বীকৃত নয়। বিশ্বের কনটেইননারের ৩০ শতাংশ লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল ব্যবহার করে। হুতিদের হামলা শুরুর পর বেশ কয়েকটি জাহাজ কোম্পানি বলেছে, তারা এ পথের বিপরীতে আফ্রিকার দিকে সরে যাবে। সর্বশেষ উত্তেজনা কি ইয়েমেনের ভঙ্গুর শান্তি ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে? : বিশ্লেষকরা বলেন, দশকব্যাপী যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতির আলোচনায় গতি আসছে বলে মনে হচ্ছে। লোহিত সাগরে জাহাজে হুতিদের হামলা ইয়েমেনে শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি হতে পারে। জাতিসংঘ গেল ডিসেম্বরের শেষে ঘোষণা দেয়, সমঝোতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, লোহিত সাগরে হুতিদের কর্মকাণ্ড চূড়ান্ত চুক্তির পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। কিছু বিশ্লেষকের ভয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রসারে গোষ্ঠীটি হয়তো তাদের বিশাল সংখ্যক সদস্য ব্যবহারে প্রলুব্ধ হতে পারে। গত কয়েক সপ্তাহে মারিবের চারপাশে ৫০ হাজার যোদ্ধা মোতায়েন করেছে। মারিব হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেনি সরকারের শেষ শক্ত ঘাঁটি। আরেক দল বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন, হুতিরা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ট করতে চাইবে।