ইরাকে ইরানি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কা

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইরাকের উত্তরাঞ্চলে ইরানের একটি বিরল ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে বাগদাদ।

আর তেহরান দাবি করেছে, ইসরায়েলি গুপ্তচরদের হুমকি প্রতিহত করার লক্ষ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে। গাজায় চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাত, হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ এবং লোহিত সাগরে নৌযানে হুথিদের হামলা ও ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার মধ্যে দুই প্রতিবেশীর এই বিরোধ আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর দাবি, তারা ইরাকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইসরায়েলি গুপ্তচরদের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। সোমবার রাতে ইরানি সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। ইরানের অভিজাত বাহিনীটি আরও দাবি করেছে, তারা সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অবস্থানেও হামলা চালিয়েছে। এই হামলার পর ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সংঘাত আরও তীব্র এবং তা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থিতিশীলতাকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েল ও মার্কিন সেনাদের অবস্থানে হামলা করছে। পাল্টা হামলাও চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আরও আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইরাক আবারও আঞ্চলিক সংঘাতের মঞ্চে পরিণত হতে পারে। বিশেষ করে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীতে যুক্ত থাকা ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর ওপর মার্কিন হামলায় এই শঙ্কা বাড়ছে। ৭ অক্টোবরের পর সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন সেনাদের অবস্থানে একাধিক হামলার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এসব হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বলেছে, গত সোমবার রাতের হামলা হলো গাজা যুদ্ধ, ইরানি কমান্ডারদের একাধিক ইসরায়েলি নৃশংসতা ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে প্রথম প্রত্যক্ষ সামরিক ব্যবস্থা। এই হামলার প্রতিবাদে বাগদাদ তেহরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছে এবং বাগদাদে নিযুক্ত ইরানি চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে। ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইনি সব পদক্ষেপ নেবে বাগদাদ। কুর্দিস্তানের রাজধানী এরবিলে মার্কিন কনস্যুলেট ভবনের আবাসিক এলাকার কাছাকাছি এই হামলা চালিয়েছে ইরান। এর নিন্দা জানিয়েছেন ইরাকি কুর্দি প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বারজানি। তিনি এটিকে কুর্দি জনগণের বিরুদ্ধে একটি অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতে চার বেসামরিক নিহত ও ছয় জন আহত হয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পার্শ্ববৈঠকে বারজানি বলেছেন, ইসরায়েলি গুপ্তচর ঘাঁটির অভিযোগ ভিত্তিহীন। এই বিষয়ে ইসরায়েলি সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে কুর্দি ব্যবসায়ী ধনকুবের পেশরাও দিজায়ি ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। ইরাকি নিরাপত্তা ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, একটি রকেট তাদের বাড়িতে আঘাত হেনেছে। হামলাকে সমর্থন করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, তেহরান অপর দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করে, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিকে প্রতিহত করা ইরানের বৈধ অধিকার। কুর্দিস্তানে হামলার পাশাপাশি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বলেছে, তারা সিরিয়ায় একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-সহ ইরানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের ধ্বংস করা হয়েছে।

বেপরোয়া : চলতি মাসে ইরানে দুটি বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে আইএস। এসব হামলায় প্রায় ১০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। ২০২০ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত জেনারেল কাসেম সোলেইমানির স্মরণসভায় এই বোমা হামলা হয়েছিল। ইরানের গার্ড বাহিনী বলেছে, শহীদদের রক্তের শেষ বিন্দুর বদলা নেওয়ার আগ পর্যন্ত হামলা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্য দিয়ে গত মাসে সিরিয়ায় বাহিনীর তিন সদস্য নিহতের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে। নিহতরা সিরিয়ায় সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন। হামলার পর ইরাকের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের দায়ে ইরানকে অভিযুক্ত করেছে ফ্রান্স। যুক্তরাষ্ট্র হামলাটিকে বেপরোয়া উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, কোনও মার্কিন স্থাপনায় আঘাত হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেউ হতাহত হয়নি। গাজায় চলমান যুদ্ধে হামাসকে সমর্থন দেওয়া ইরান অভিযোগ করে আসছে, গাজায় ইসরায়েলি অপরাধে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, তারা গাজায় ইসরায়েলি অভিযানকে সমর্থন করে কিন্তু ফিলিস্তিনি হতাহতের সংখ্যা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অতীতে কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইরানি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইসরায়েলি গুপ্তচরদের উপস্থিতির অভিযোগ তুলে কুর্দিস্তানে হামলা চালিয়েছে তেহরান। বাগদাদ এই উদ্বেগ নিরসনে কাজ করার চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালে তারা একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তেহরানের সঙ্গে। ইরাকি কুর্দিস্তানের সন্ত্রাস দমন পরিষেবা জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সকালে এরবিল বিমানবন্দরে তিনটি সশস্ত্র ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। অতীতে এমন কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরানপন্থি ইরাকি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ইসলামিক রেসিস্ট্যান্স ইন ইরাক। বেশ কয়েকটি হামলার পর সিরিয়া ও ইরাকে মোতায়েন থাকা মার্কিন ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বেশিরভাগ হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেসিস্ট্যান্স ইন ইরাক। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থনের অভিযোগে মার্কিন সেনাদের অবস্থানে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে।