বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার গণটিকা দেওয়া শুরু করেছে ক্যামেরুন

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বিশ্বে প্রথমবারের মতো ম্যালেরিয়ার নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ক্যামেরুন। এর ফলে আফ্রিকাজুড়ে হাজারো শিশুর মৃত্যু ঠেকানো যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় গত সোমবার ইয়ান্ডুবের কাছে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক কন্যাশিশুকে টিকা দেওয়ার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) অনুসারে আফ্রিকাতে প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় ৬ লাখ মানুষ মারা যায়। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ রয়েছে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুরা। ক্যামেরুন ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশুকে বিনামূল্যে আরটিএস ও এস ভ্যাকসিন প্রদান করছে। রোগীদের মোট চারটি ডোজের প্রয়োজন হয়। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, অভিভাবকদের জন্য সহজ করতে শৈশবের অন্যান্য রুটিন টিকাগ্রহণের সঙ্গে এই চার ডোজ টিকাও দেওয়া হবে। ম্যালেরিয়ার এই টিকা শিশুদের মধ্যে এ রোগের হার ১৩ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। কেনিয়া, ঘানা এবং মালাউইতে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।

মার্কিন গবেষকদের মতে, এই টিকা ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর, অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের জীবন বাঁচাতে পারবে। এন্ড ম্যালেরিয়া কাউন্সিল কেনিয়ার কর্মকর্তা উইলিস আখওয়ালে বলেন, যদিও এই টিকা নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তি ও জীবন রক্ষাকারী। কিন্তু টিকাটি কার্যকারিতা তুলনামূলক কম হারের কারণে এটিই ‘সিলভার বুলেট’ নয়। কিন্তু চিকিৎসকদের জন্য এই টিকা মশারি ও ম্যালেরিয়া ট্যাবলেটের পাশাপাশি ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত হাতিয়ার। তিনটি একসাথে ব্যবহার করলে শিশুদের ম্যালেরিয়া থেকে ৯০ শতাংশ সুরক্ষা দেওয়া যাবে বলে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণায় জানা গেছে। ক্যামেরুনে ম্যালেরিয়ার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় সহায়তা করেছেন চিতিৎসক শালম এনদৌলা। তিনি বিবিসি বলেছেন, ‘ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া বা মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। বিখ্যাত ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জিএসকে প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে আরটিএস, এস টিকা তৈরি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। ক্যামেরুনে টিকাদান শুরুর ঘটনাকে বিশ্বে মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে টিকার সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু ক্যামেরুনিয়ানদের মধ্যে ভয় এবং সন্দেহ তৈরি করেছে। ক্যামেরুনের রাজা এবং ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ জনস্বাস্থ্য বায়োটেকনোলজির একজন অধ্যাপক উইলফ্রেড ফন এমবাচাম বিবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘লোকেরা বলে, আমাদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, আসলে এটি সত্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানী হিসেবে এই টিকা কী এবং এর সুবিধাগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে জানানো উচিত, যাতে আমরা তাদের ভয়কে দূর করতে পারি।’