জাপানে টানা অষ্টম বছরের মতো গত বছর শিশুর জন্মহারের সংখ্যা কমে নতুন করে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি তথ্যে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। দেশেটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী ৬ বছরে এই প্রবণতা বিপরীতমুখী করা দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর ইউএনবি।
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে জাপানে ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩১ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ কম। ১৮৯৯ সালে জাপান এই পরিসংখ্যান সংকলন শুরু করার পর থেকে এটিই সর্বনিম্ন জন্মহারের রেকর্ড। পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিয়ের সংখ্যা কমেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ২৮১ দম্পতিতে দাঁড়িয়েছে, যা বিগত ৯০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো অর্ধ মিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে। এটি শিশু জন্মহার কমার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে পিতৃতান্ত্রিক ঐতিহ্যের উপর ভিত্তিতে এবং পারিবারিক মূল্যবোধের কারণে জাপানে বিবাহবহির্ভূত সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনা বিরল। জরিপে দেখা গেছে, অনেক তরুণ জাপানিরা বিয়ে বা পরিবার গঠনে অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে চাকরির সম্ভাবনা কম থাকায় তারা নিরুৎসাহিত হন। এছাড়া আয়ের চেয়ে জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া এবং কর্পোরেট সংস্কৃতি- যা বাবা-মা উভয়েরই কাজ করার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন কারণও উল্লেখযোগ্য। এমনকি কান্নাকাটি করা শিশু এবং শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করা ক্রমবর্ধমানভাবে একটি উপদ্রব হিসেবে বিবেচিত হয় তাদের কাছে। এর বাইরে অনেক তরুণ বাবা-মা বলেন, তারা প্রায়শই বিচ্ছিন্ন বোধ করেন। চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিমাসা হায়াশি গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, চলমান নিম্নগামী জন্মহার ‘সংকটজনক অবস্থায়’ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী ছয় বছর বা ২০৩০ সাল পর্যন্ত তার বেশি সময় তরুণ জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করবে, তখন আমরা এই প্রবণতা বিপরীত করতে সক্ষম হতে পারি। নষ্ট করার মতো সময় নেই।’
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা নিম্ন জন্মদানকে ‘জাপানের সবচেয়ে বড় সংকট’ বলে অভিহিত করেছেন এবং একটি প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন যার মধ্যে বেশিরভাগ প্রসব, শিশু এবং তাদের পরিবারের জন্য আরো সহায়তা এবং ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারের এই প্রচেষ্টা কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে তারা সন্দিহান।
