রাশিয়া ও চীনের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে শঙ্কা

কী ভাবছে ইইউ সংসদ

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইউরোপীয় সংসদ, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের গুপ্তচরবৃত্তির কয়েকটি অভিযোগ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। জুনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইইউ নির্বাচনেও হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। ইউরোপীয় সংসদের সদস্য ও তাদের কর্মীরা কাতার, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন বলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

ইউরোপীয় সংসদের ওপর ওই তিন দেশের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় এমন লেনদেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লাটভিয়ার ইউরোপীয় সংসদ সদস্য টাটিয়ানা আশডানোকা কয়েক বছর ধরে রুশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করছেন বলে এ বছরের শুরুতে খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত মাসে চেক প্রজাতন্ত্র ‘ভয়েস অব ইউরোপ’ নামের একটি নিউজ আউটলেট নিষিদ্ধ করে। অভিযোগ, তাদের কার্যক্রমে রাশিয়ার প্রভাব ছিল। এর কয়েক দিন পর বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দা ডে ক্রো জানান, ‘রুশ প্রোপাগান্ডা প্রচার করতে’ রাশিয়া ইউরোপীয় সংসদ সদস্যদের অর্থ দিয়েছে। আর এ সপ্তাহে জার্মানির উগ্র ডানপন্থি ইউরোপীয় সংসদ সদস্য মাক্সিমিলিয়ান ক্রাহর সহকারী জিয়ান জিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। জার্মানির নাগরিক জিয়ান জি চীনা গোয়েন্দাদের হয়েও কাজ করতেন বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। গত বুধবার ক্রাহর বিরুদ্ধেও প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। কারণ সম্প্রতি জার্মান ও চেক প্রজাতন্ত্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশপন্থি বার্তা প্রচার করতে তিনি অর্থ নিয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্রাহ। এদিকে এ সপ্তাহে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা চীনের হয়ে কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ। বেইজিং এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলার পর প্রথম ১১ মাসে ৪৯০ জন রুশ কূটনীতিককে ইইউর বিভিন্ন দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এসব তথ্য জানিয়েছিল পোলিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (পিআইএসএম)। সংস্থার কর্মকর্তা এলসবিয়েটা কাসা বলেন, ইইউজুড়ে রুশ গুপ্তচরবৃত্তি চললেও ‘ইউরোপের যেসব দেশে ন্যাটোর অবকাঠামো ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দপ্তর রয়েছে সেসব দেশে তারা বেশি সক্রিয়’। ইইউর অধিকাংশ সংস্থা ও ন্যাটোর সদর দপ্তর বেলজিয়ামে অবস্থিত। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী ক্রো গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আমরা যখন কথা বলছি, তখনো ইইউর নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ঘটে চলেছে। তারা আমাদের গণতন্ত্রকে ব্যাহত করতে চায়।’ সুইডিশ ডিফেন্স রিসার্চ এজেন্সি বলছে, ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যত ইউরোপীয় নাগরিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশের সঙ্গে মস্কোর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

কী ভাবছে ইইউ সংসদ : গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকাতে ইউরোপীয় সংসদ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব কর্তৃপক্ষের তদন্তের ওপর নির্ভর করে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ইইউ সংসদের এক মুখপাত্র। এছাড়া মুখপাত্র বলেন, ইউরোপের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ক্রেমলিনের প্রচার বাড়াতে সহায়ক হওয়ার অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে ইইউ সংসদ। চীনের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে রাশিয়ার কার্যক্রমের প্রভাব কমাতে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে এক চিঠিতে লিখেছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী ক্রো ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেটার ফিয়ালা। এ ছাড়া প্রয়োজনে আরো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও পরামর্শ দেন তারা। সম্প্রতি গঠন করা ইউরোপিয়ান পাবলিক প্রসিকিউটরস অফিস এসব কার্যক্রমের বিচার করতে পারে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে বলেছেন ক্রো ও ফিয়ালা। ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কাউন্টার টেররিজম বিষয়ে সহযোগিতা বাড়লেও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টি এখনো অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করা হয়। এই বিষয়ে উন্নতির জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন পিআইএসএম কর্মকর্তা এলসবিয়েটা কাসা। এ ক্ষেত্রে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে কাজ করা সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।