অস্ত্র বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়ার পথে জার্মানি

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ আর সৌদি আরবে বিক্রি বাড়ায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই জার্মানির অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭.৪৮ বিলিয়ন ইউরো, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। গত রোববার দেশটির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এই তথ্য। চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৮ জুনের মধ্যে জার্মান সরকার অন্তত ৭.৪৮ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করেছে। গত ১৮ জুন নাগাদ আগের বছরের তুলনায় অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে চলতি বছর অস্ত্র বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়বে ইউরোপের দেশটি।

জার্মানির অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ গতবছরও সর্বকালের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছিল। সেবছর ১২.২ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করে দেশটি। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে অস্ত্র বিক্রির এই পরিমাণ বেড়ে যায়। এরমধ্যে ৬.৪৪ বিলিয়ন ইউরোর মতো ছিল সমরাস্ত্র এবং ৫.৭৬ বিলিয়ন ইউরোর ছিল অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ওলাফ শুলজের জোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় অবশ্য ঘোষণা দিয়েছিল যে অস্ত্র রপ্তানি সংযত করা হবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তূর্ভক্ত নয় এবং ন্যাটো সদস্য নয় এমন দেশেরক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে। জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রপন্থি দল এসপিডি, পরিবেশবান্ধব গ্রিন পার্টি এবং ব্যবসাবান্ধব উদার গণতন্ত্রী দল এফডিপির গড়া জোট সরকার অস্ত্র রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার আনার পরিকল্পনা করেছিল। শুলজ সরকার ক্ষমতা নেয়ার কয়েক মাস পর রাশিয়ার ট্যাংক ইউক্রেনে প্রবেশ করে। ফলে অস্ত্র রপ্তানির উপর আরো নিয়ন্ত্রণ আরোপের জার্মানির পরিকল্পনা বাক্সবন্দি হয়।

অধিকাংশ জার্মানি অস্ত্র ইউক্রেনে রপ্তানি : নতুন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দুই-তৃতীয়াংশ অস্ত্রই ইউক্রেনে রপ্তানি করা হয়েছে। এবছর এরইমধ্যে ৪.৮৮ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠিয়েছে শুলজ সরকার। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের প্রথম বছরে বার্লিন কিয়েভে ২.২৪ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করে। এরমধ্যে আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং ভারি কামান অন্তর্ভুক্ত ছিল। গত বছর ইউক্রেনে রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে ৪.৪ বিলিয়ন ইউরো করা হয়, এর মধ্যে লেপার্ড দুই ব্যাটল ট্যাংক অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই জার্মানির অবস্থান।

সৌদি আরবে আবারো অস্ত্র রপ্তানি : জার্মানি যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করছে তারমধ্যে আরো আছে সিঙ্গাপুর (১.২১ বিলিয়ন ইউরো), ভারত (১৫৩.৭৫ মিলিয়ন ইউরো), সৌদি আরব (১৩২.৪৮ মিলিয়ন ইউরো) এবং কাতার (১০০ মিলিয়ন ইউরো)। গত বছরের জুলাইয়ে বার্লিন রিয়াদের কাছে অস্ত্রবিক্রির উপর বিধিনিষেধ শিথিল করলে দেশটি এই তালিকায় চলে আসে। ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করে জার্মানি। ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। স্থগিতাদেশের আরেকটি কারণ ছিল ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ সৌদি আরবের সম্পৃক্ততা। রিয়াদ অবশ্য তারপর প্রতিবেশিদের প্রতি নমনীয় হয়েছে। সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি পুনরায় শুরুরক্ষেত্রে কিংডমটির সঙ্গে অন্যান্য ন্যাটো এবং ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের অংশীদারিত্বে চলা প্রকল্পগুলোকে বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বাম জোটের সমালোচনা : বামপন্থি পপুলিস্টদের জোট স্যারা ভাগেনক্নেশ্ট এলায়েন্সের রাজনীতিবিদ সেভিম ড্যাডেলেনের অনুরোধের ভিত্তিতে অস্ত্র রপ্তানির বিস্তারিত প্রকাশ করে অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ড্যাডেলেন ‘যুদ্ধ এবং সংকটপূর্ণ অঞ্চলে’ অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ব্যাপার বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি শুলজের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনকালীন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগও এনেছেন।