ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইরানের রাজধানী তেহরানে তার বাসস্থানে ‘জায়নবাদী গুপ্ত হামলায়’ এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে তারা। হামাস বলছে, গত মঙ্গলবার ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর তাকে হত্যা করা হয়। তবে ঘটনার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার পর নতুন করে সবার নজরে আসে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তখন থেকেই বিশ্ব গণমাধ্যমে বহুল চর্চিত একটি নাম ইসমাইল হানিয়া। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়ার ডাক নাম আবু আল-আবদ। তিনি জন্মেছিলেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে। হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান তিনি এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শিক্ষাজীবনের প্রথমে হানিয়া গাজার আল-আজহার ইনস্টিটিউটে এবং পরে গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানেই তিনি আরবি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে বিশ্ববিদ্যাল ছাত্র থাকাকালীন তিনি হামাসের অগ্রদূত ইসলামিক ছাত্র ব্লকে যোগদান করেন। গত শতকের আশির দশকে হামাসের উত্থানকালে ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের এই রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন ইসমাইল হানিয়া।
ইসরায়েল ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছর বন্দি করে রাখে। এরপর তাকে মারজ আল-জুহুর নামের ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যকার একটি নো ম্যানস ল্যান্ডে নির্বাসিত করা হয়। সেখানে তিনি ১৯৯২ সালে বেশ কয়েকজন হামাস নেতার সঙ্গে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে একটি পুরো বছর কাটিয়েছিলেন। নির্বাসনে থাকার পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ১৯৯৭ সালে হামাস আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, যা তার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করে।
২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হামাস হানিয়াকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করে এবং একই মাসের ২০ তারিখ তাকে নিযুক্ত করা হয়। এক বছর পর ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হানিয়াকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন। কারণ, ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেডস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করে। সেই সহিংসতায় অনেকে মারা যান। হানিয়া এরপর বেশ কয়েকবার ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৬ মে থেকে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।