ইসরায়েলে ইরানি হামলা অনিবার্য, শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসরায়েলে ইরান ও দেশটির মিত্র হিজবুল্লাহর হামলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। অবিলম্বে এ হামলা চালানো হতে পারে বলে জি৭ মিত্রদের কাছে জানিয়েছেন তিনি। সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এ খবর দিয়েছে। ইরানে ইসরায়েলি হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহতের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যেই ওয়াশিংটনের এমন আশঙ্কার কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাদের পক্ষ থেকেও গত কয়েক দিন ধরেই তাদের নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করা হচ্ছে। দলগুলোর নেতাদের অবস্থান হচ্ছে, এই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে একটি যুদ্ধ লেগে গেলেও তাদের কিছু করার নেই। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আরব বিশ্ব ও মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, তারা যেন ইসরায়েলে হামলা না চালায়। কিন্তু জবাবে ইরান ও হিজবুল্লাহ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নেতাদের হামলার শোধ নিতে তারা হামলা চালাবেই। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাধার শঙ্কার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গত বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন ইসমাইল হানিয়া। অন্যদিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হিজবুল্লাহ কমান্ডার শুখর। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, উত্তেজনা নিরসনে জর্ডান ও লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেশ দুটির দূতদের তেহরান সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইসরায়েলে হামলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এ অবস্থান থেকে পিছু হটা সম্ভব নয়। আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি জানিয়েছে, তেল আবিবের আশঙ্কা, টানা কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে ইরান। সম্ভাব্য ওই হামলা মোকাবিলায় এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। চলমান উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। দলটি জানিয়েছে, তারা ড্রোন দিয়ে আয়েলেট হাশাহারে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ৯১তম ডিভিশনের ব্যারাকে আক্রমণ করেছে। সরাসরি চালানো এই হামলায় ইসরায়েলি সেনারা হতাহত হয়েছে। তেল আবিবের তরফে হামলায় তাদের দুই সেনা আহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ফুয়াদ শুখরের হত্যাকাণ্ডের পর উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কায় ইতালি ও তুরস্ক তাদের নাগরিকদের লেবানন ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি লেবাননে অবস্থানরত ইতালীয়দের ‘যত দ্রুত সম্ভব বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইতালিতে ফেরা’র আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লেবাননে তার নাগরিকদের ‘সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং একেবারে প্রয়োজন না হলে নাবাতিহ, দক্ষিণ লেবানন, বেকা ও বালবেক-হারমেল অঞ্চলে ভ্রমণ না করার’ পরামর্শ দিয়েছে। নাগরিকদের ‘অপরিহার্য কোনো কারণ না থাকলে’ তাদের লেবানন ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের লড়াই শুরুর পর থেকে লেবাননে কমপক্ষে ৫৪২ জন নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই হিজবুল্লাহর যোদ্ধা। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ১১৪ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। অন্যদিকে হিজবুল্লাহর হামলায় ২২ সেনাসদস্য, ২৫ বেসামরিক নাগরিকসহ ৪৭ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।

এ ছাড়া নিয়মিত গোলাবর্ষণের কারণে সীমান্তের উভয় পাশের বাসিন্দা কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদিকে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে ইয়েমেনের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। গতকাল ইয়েমেনের আকাশসীমায় একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে দলটি। হুথি বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারির দাবি, তার দেশের উত্তরাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশের আকাশে গোয়েন্দা মিশন পরিচালনার সময় একটি অত্যাধুনিক মার্কিন এককিউ-৯ ড্রোনগুলো করে ভূপাতিত করা হয়েছে।