আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ঝুঁকিতে জার্মানি!

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে ১৩ হাজার বছর আগে অগ্ন্যুৎপাতের পর সৃষ্ট খাদে পানি জমে লাখার সে বা লেক লাখ সৃষ্টি হয়। গবেষকরা সেই আগ্নেয়গিরির এলাকায় গবেষণা করে দেখছেন যে আবারো কখনো সেখানে অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে পারে কি না।

জার্মানিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আগ্নেয়গিরিটি ঘুমিয়ে আছে এখানে। এবং সেটা নানা কারণে। প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে জার্মানির পশ্চিমে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর লেক লাখ সৃষ্টি হয়। একটি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের স্তম্ভ কত উঁচু হয়? কী পরিমাণ উপাদানের উদগীরণ হয়? ভলকানিক এক্সপ্লোসিভ ইনডেক্সের মান শূন্য থেকে আটের মধ্যে থাকে। লেক লাখে অগ্ন্যুৎপাতের মাত্রা ছিল ছয়। এটির মতো বড় অগ্ন্যুৎপাতগুলো সাধারণত সংশ্লিষ্ট এলাকাকে আর্কাইভে পরিণত করে। আগ্নেয়গিরির শিলাগুলোর রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করে অতীত সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এটার মতো কোনো আগ্নেয়গিরি জার্মানিতে নেই। কিন্তু আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্র রয়েছে। লেক লাখের অবস্থান সেগুলোর একটির কেন্দ্রে। জিএফজেড পৎসডামের টর্স্টেন ডাম বলেন, ‘আইফেল অঞ্চল এখনো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি, যদিও ঝুঁকি আছে যে সেখানে আবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে পারে। অবশ্যই আমাদের কাছে এখন যে কৌশল রয়েছে সেটা প্রয়োগ দরকার যাতে বিশ্বব্যাপী এবং সুনির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোতে আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণ করা যায়।’ লেক লাখের চারপাশে শিলার ধ্বংসাবশেষের দেয়াল রয়েছে। আগের গবেষকদের কাছে এটা মার আগ্নেয়গিরির প্রমাণ। সেখানে অগ্নুৎপাতের পর ফানেল আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয় যা পরে পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু লেক লাখ অনেক বড়, তাই এখনকার গবেষকরা এটিকে কাল্ডেরা আখ্যা দিয়েছেন। এটা তৈরি হয় যখন কোনো ম্যাগমা চেম্বার খালি হয় এবং আগ্নেয়গিরির অংশবিশেষ ধসে যায়। আগ্নেয়গিরিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেই অনেকদিন ধরে মনে করা হচ্ছে। তারপরও গবেষকরা অঞ্চলটিকে আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চান। জিএফজেড পৎসডামের টর্স্টেন ডাম বলেন, ‘এটা এখানকার এক বিশেষ এলাকা? এখানে যা দেখা যাচ্ছে তাকে বলে বিতরণকৃত আগ্নেয়গিরি। এর অর্থ হচ্ছে আগ্নেয়গিরির বিপদ ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।’ টর্স্টেন ডামের দল এই গুহাটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আগ্নেয়গিরির কর্মকাণ্ড আরো বুঝতে চান। ১৩ হাজার বছর আগের অগ্ন্যুৎপাতের অগ্নেয়গিরিজাত শিলা এখনো রয়ে গেছে। আগ্নেয়গিরির শিলা ভবন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। গত কয়েক শতকে এখান থেকে এরকম শিলা তোলা হয়েছে। আজ ভিন্ন কারণে লাভা খনি গবেষণার জন্য চমৎকার স্থানে পরিণত হয়েছে। কারণটা হচ্ছে এখানে রাস্তার শব্দ বা বৃষ্টি বিরক্ত সৃষ্টি করতে পারছে না। ফলে মাটির নিচে কী হচ্ছে তা নীরবে শোনার জন্য আদর্শ জায়গা এটি। টর্স্টেন ডাম বলেন, ‘আমরা ভূমিকম্পের সিগন্যাল মাপতে চাই, এবং সেটা সবচেয়ে ভালো করা যায় আপনি যখন বেডরকে থাকেন যেমন এখানে।’

আগ্নেয়গিরির কর্মকাণ্ডের আরেকটি সম্ভাব্য ইঙ্গিত হচ্ছে মোফেটস বা বায়বীয় আগ্নেয়গিরির ভেন্ট। এর মধ্যে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড কি ম্যাগমা বাড়ার ইঙ্গিত? অনেক গভীরে আগ্নেয়গিরি কম্পনের ইঙ্গিত ছাড়াও মাটির নিচে গলা শিলা বা ম্যাগমার ইঙ্গিত বহন করে ভেন্ট। টর্স্টেন ডাম বলেন, ‘এটা একটা ইঙ্গিত যে, আমাদের আসলেই আইফেলে গলিত শিলা রয়েছে, বিশেষ করে উপরের আবরণে।

তবে রোমাঞ্চকর প্রশ্নটি অবশ্যই এই গলিত শিলা বের হতে চাইবে কি না। এটা কি ভূত্বক ভেদ করে বাইরে আসতে পারবে?’ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নতুন তথ্য দিচ্ছে। যেমন আজকে আমরা জানি যে, এই অঞ্চলে শুধু একটি ম্যাগমা চেম্বার রয়েছে এমন নয়, বরং এটি বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে রয়েছে। গবেষকদের এই উদ্যোগ শিগগিরই আমাদেরকে আইফেল অঞ্চল এবং আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে আরো ধারণা দেবে।