যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নির্বাচনের ভোট শেষে বুথ ফেরত জরিপে (এক্সিট পোল) বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ইস্যুগুলোর চিত্র উঠে এসেছে। নির্বাচনের রাতে এমন জরিপের ফল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্য থেকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি পর্যালোচনা তুলে ধরেছে। বিবিসির প্রাথমিক পর্যালোচনায় নারী, বর্ণ ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভোটারদের বিভাজন স্পষ্ট।
নারীদের ভোটে এগিয়ে কমলা হ্যারিস : বুথ ফেরত জরিপের তথ্য অনুসারে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস নারীদের মধ্যে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তা ছিল প্রত্যাশিত ব্যবধানের চেয়ে কম।
হ্যারিস নারীদের ৫৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৪৪ শতাংশ। ২০২০ সালের নির্বাচনে নারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ জো বাইডেনকে সমর্থন করেছিলেন। ফলে এ বছর বছরে হ্যারিসের সমর্থন সামান্য কমেছে।
বর্ণভিত্তিক ভোটারদের মধ্যে বিভাজন : বর্ণভিত্তিক ভোটারের ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও, হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন বেশি পেয়েছেন। হিস্পানিকদের মধ্যে হ্যারিস কিছুটা এগিয়ে থাকলেও ২০২০ সালের তুলনায় ট্রাম্পের সমর্থন প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন বেশি দেখা গেছে। অন্যদিকে মধ্যবয়সী ভোটারদের অধিকাংশ ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন। ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে সমর্থন প্রায় সমান ভাগে বিভক্ত।
শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে ভোটারদের অভিমত : কলেজ শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন, তবে কলেজ ডিগ্রিহীন ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প সমর্থন পেয়েছেন প্রায় অনুরূপ অনুপাতে।
গণতন্ত্র ও অর্থনীতি : প্রধান ইস্যু- এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে গণতন্ত্র ও অর্থনীতি ছিল প্রধান ইস্যু। যা বুথ ফেরত জরিপের তথ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটার গণতন্ত্রকে প্রধান ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, পরের স্থানে রয়েছে অর্থনীতি। এ ছাড়া গর্ভপাত, অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে। অর্থনীতি ২০০৮ সাল থেকে প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হিসেবে থাকলেও এবার গণতন্ত্র সমানভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। হ্যারিস সমর্থকদের প্রায় ৬০ শতাংশ গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আর ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ বেশি ছিল।
সহিংসতার আশঙ্কা ও গণতন্ত্রের প্রতি উদ্বেগ : ভোটারদের মধ্যে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, প্রায় ৭০ শতাংশ মনে করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে পরিচালিত হয়েছে। তবে হ্যারিসের সমর্থকরা এই বিষয়ে বেশি আস্থা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে মতবিভেদ রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটারই নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এমন আশঙ্কা মার্কিন নির্বাচনের জন্য নতুন।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া : অর্থনৈতিক অবস্থার প্রশ্নে ভোটারদের মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ মনে করেন, তাদের আর্থিক অবস্থা ২০২০ সালের চেয়ে খারাপ হয়েছে। আর মাত্র ১০ শতাংশ মনে করেন তারা ভালো আছেন। অন্যদিকে, হ্যারিস সমর্থকদের মধ্যে চারজনের একজন মনে করেন তারা বর্তমানে ভালো অবস্থানে আছেন। মুদ্রাস্ফীতি নিয়েও দুই দলের সমর্থকদের মতপার্থক্য রয়েছে। ট্রাম্প সমর্থকদের এক-তৃতীয়াংশ বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি তাদের পরিবারে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। আর হ্যারিস সমর্থকদের মাত্র ১০ শতাংশ এ ধরনের প্রভাব অনুভব করেছেন।
জাতীয় অর্থনীতির মূল্যায়ন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার মনে করেন বর্তমান অবস্থা ‘তেমন ভালো নয়’ বা ‘দুর্বল’। তবে এই ধারণাটি ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে বেশি স্পষ্ট।