ট্রাম্পের বিজয়

ন্যাটো ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য কী ভাগ্য ডেকে আনছে?

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত হলেও ইউরোপ ও ন্যাটোর মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগের দায়িত্বকালীন অভিবাসন নীতি এবং সামরিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার পর এবারো তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগে ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ও ইউরোপ নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের জন্য এই মেয়াদে নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার চাপ বাড়তে পারে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি শুধু ইউরোপীয় মিত্রদের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কাঠামো পরিবর্তন করবে, বিশেষ করে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের এই মেয়াদে ইউরোপীয় মার্কিন মিত্রদের একতা ধরে রাখার কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

এমনকি ন্যাটোর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের সামরিক বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করা এবং নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করাকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি পররাষ্ট্রনীতির উপর একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর মাধ্যমে সমকালীন সংকটের মধ্যে ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতি একটি হোঁচট খেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে পারে। ট্রাম্পের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা হলেও, কিয়েভকে শান্তি আলোচনায় বসার জন্য চাপ দেয়া হতে পারে, যা পশ্চিমা সমর্থকদের জন্য অপ্রত্যাশিত হতে পারে। এ ছাড়া, ট্রাম্পের ন্যাটো সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর চাপ ন্যাটোর ঐক্যকে তলানিতে ঠেলে দিতে পারে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এসব পরিবর্তন ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্লোবাল শক্তির সঞ্চালনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তিনি একদিনেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারেন। তবে এই বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকায় সংশয় রয়ে গেছে। তার সাবেক প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে তবে কিয়েভকে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আসতে বাধ্য করতে পারে। এ নিয়ে বিশেষ করে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ ট্রাম্প যদি ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার মতো পদক্ষেপে যান, তবে এটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন বয়ে আনবে।

ইউক্রেন সংকট ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। ইসরায়েলের সঙ্গে হামাস ও হিজবুল্লাহর চলমান সংঘাত বন্ধ করার লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করলেও তিনি কীভাবে তা করবেন, তা স্পষ্ট করেননি। ইসরায়েলের প্রতি তার সমর্থন এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকে যায়, এসব সম্পর্ক কি শান্তি আনবে, না কি উত্তেজনা আরো বাড়াবে।