রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খান। তিন বিচারক নিয়ে গঠিত আইসিসির একটি প্যানেল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা দেখবেন মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মতো ‘উপযুক্ত কারণ’ আছে কিনা। মিয়ানমারের এই জেনারেলের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ ছাড়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউটরের আবেদনের পর আইসিসির বিচারকরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ব্যাপারে কখন সিদ্ধান্ত নেবেন সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তবে সাধারণত এমন আবেদনের তিন মাসের মধ্যে বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আইসিসির এই পদক্ষেপের ব্যাপারে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনো মন্তব্য করেনি। গত সপ্তাহে করিম খানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োহাভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। এই পরোয়ানা জারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক চাপের মুখে আছেন তিনি। প্রসিকিউটেরর অফিস বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের বিরুদ্ধে বিস্তৃত, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের পর তারা তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ জানিয়েছে। মিয়ানমারের আরো উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে বলে উল্লেখ করেছে প্রসিকিউটরের অফিস। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গণহত্যার উদ্দেশে’ রোহিঙ্গাদের ওপর এসব নির্যাতন চালানো হয়েছিল। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়। তবে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে আদালতটির বিচারকরা বলেছিলেন, মিয়ানমারের এই অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার তাদের আছে। কারণ মিয়ানমারের প্রতিবেশী বাংলাদেশ এই আদালতের সদস্য। আর যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেগুলো দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হয়েছে। আইসিসি গত পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে তদন্ত করছে। তবে মিয়ানমারে আদালতের প্রসিকিউটরকে প্রবেশ করতে না দেয়ায় তদন্ত বাধাগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে আবার ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করেন সেনাপ্রধান।