আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিয়া প্রদেশে চারটি জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। নিষিদ্ধঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। হামলার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার তালেবান সরকারের মুখপাত্রের বরাতে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে। ২০২১ সালে তালেবান সরকার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধির পেয়েছে। এই উত্তেজনার সর্বশেষ রূপ ছিল সর্বশেষ হামলা।
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, দেশের পূর্ব পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলার চারটি এলাকায় পাকিস্তান বোমাবর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ‘মোট মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আরও ছয়জন আহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই শিশু।’ একটি বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এটিকে তাদের ‘বর্বর’ ও ‘স্পষ্ট আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তালেবান কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামী আমিরাত এই কাপুরুষোচিত কাজের উচিত জবাব না দিয়ে ছেড়ে দেবে না, বরং দেশের অঞ্চল ও সার্বভৌমত্বের প্রতিরক্ষাকে দেশের অবিচ্ছেদ্য অধিকার বলে মনে করে’ আফগানিস্তান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানের একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে আফগানিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলোকে লক্ষ্য করে’ হামলাগুলো করা হয়েছিল। মার্চে আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে মারাত্মক বিমান হামলার চালিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। এর পরই দুদেশের সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু হয়। তালেবান কর্তৃপক্ষের মতে, ওই হামলায় আটজন বেসামরিক নিহত হন। বারমালের বাসিন্দা মালেল এএফপিকে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবারের হামলায় এক পরিবারের ১৮ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘বোমা হামলা দু-তিনটি বাড়িতে আঘাত হানে। এতে করে একটি বাড়িতে ১৮ জন নিহত হন। পুরো পরিবারই প্রাণ হারায়।’ তিনি আরও বলেন, হামলায় অন্য একটি বাড়িতে আরো তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতরা স্থানীয় বাসিন্দা এবং ওয়াজিরিস্তান থেকে পাকিস্তান সীমান্তে পালিয়ে এসেছিলেন। পাকতিকার সীমান্তবর্তী উত্তর ওয়াজিরিস্তান ঐতিহাসিকভাবে জঙ্গিদের আস্তানা। ৯/১১ এর পর আফগানিস্তান দখলের সময় এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান পাকিস্তানি সামরিক আক্রমণ এবং মার্কিন ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামে পরিচিত পাকিস্তানি তালেবান এবং তাদের আফগান সমকক্ষরা একটি অভিন্ন মতাদর্শ ভাগ করে নেয়ার পরই এই হামলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের সীমান্তের কাছে একটি সেনা চৌকিতে অভিযান চালানোর দাবি করেছে পাকিস্তানি তালেবান। ওই হামলায় ১৬ পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের শাসনে তালেবান সরকার ফিরে আসার পর থেকে পাকিস্তান দেশের পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি সহিংসতার পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কাবুলের তালেবান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করেছে পাকিস্তান। দেশটি তাদের দায়মুক্তির সঙ্গে পাকিস্তানের মাটিতে হামলা করার অনুমতিও দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে ইসলামাবাদের। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাবুল। আফগানিস্তানের মাটি থেকে বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে উচ্ছেদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। তবে জুলাইয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, দেশটিতে প্রায় ৬সাড়ে ৬ হাজার টিটিপি জঙ্গি রয়েছে।
সেটিতে আরো বলা হয়, ‘তালেবানরা টিটিপিকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে কল্পনা করে না’। সীমান্তে হামলার বৃদ্ধি ইসলামাবাদণ্ডকাবুল সম্পর্ককে তিক্ত করে তুলেছে। নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে গত বছর কয়েক হাজার অনথিভুক্ত আফগান অভিবাসীকে উচ্ছেদের অভিযান চালিয়েছিল পাকিস্তান। এটিকেও চলমান উত্তেজনার অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করা হয়। আফগান ভূখণ্ডে সর্বশেষ হামলার বিষয়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে মঙ্গলবার, কাবুল সফরে থাকা আফগানিস্তানের জন্য পাকিস্তানের বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন উচ্চণ্ডপর্যায়ের তালেবান কর্মকর্তারা।