রয়টার্স লিখেছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী ৬০টির বেশি দেশে এ বছর ভোট হয়েছে। সহিংসতা ও বড় রকমের ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে অনেক দেশে। কিন্তু এরপরও ‘মাথা নোয়ায়নি’ গণতন্ত্র। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দুটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফিরেছেন। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তুমুল প্রতিযোগিতা আর অস্থিরতার ভয় নিয়েও তিনি হোয়াইট হাউসের টিকেট নিশ্চিত করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে তিনি নতুন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসছেন। বিদায়ী বছরে মেক্সিকোর মানুষ তাদের সবথেকে রক্তক্ষয়ী নির্বাচন দেখেছে। নির্বাচন ঘিরে সেখানে ৩৭ প্রার্থী বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সবকিছু ছাপিয়ে নির্বাচনে দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ক্লডিয়া শেইনবাউম। চারটি মহাদেশের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন নেতারা গদি ছেড়েছেন। নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ভোটারদের ইচ্ছানুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। অপরদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে দীর্ঘ সময় মসনদে থাকা দল ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছে। কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
গণতন্ত্রের অবস্থা বোঝা কেন জরুরি তা চলতি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মিত্র, এশিয়ার চতুর্থ বড় অর্থনীতির দেশটির প্রেসিডেন্ট তিন সপ্তাহ আগে হঠাৎ সামরিক আইন জারি করেন। এরপরই কয়েক ঘণ্টার টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তার ওই ঘোষণার পরই আইনপ্রণেতারা ও জনগণের প্রবল বিরোধিতা আর বিক্ষোভের মুখে দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। পরে তিনি দুই দফা অভিসংশনের মুখে পড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত হন। ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে কট্টর ডানপন্থিরা সফলতা পেয়েছে। রোমানিয়াতেও একই চিত্র দেখা গেছে, তবে সেখানে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠায় পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ইউরোপ আবার ১৯৩০ এর দশকের মতো কোনো অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কি না, যে সময়টায় ফ্যাসিবাদের জাগরণ ঘটেছিল। জর্জিয়া ও মলদোভায় রাশিয়া ঘেঁষা দলগুলো জনমত জরিপের চেয়েও ভালো করেছে। ইউরোপ ডানপন্থিদের অর্থনৈতিক উদ্বেগের দিকে ঝুঁকলেও একই উদ্বেগ কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। যেমন- ব্রিটেনে বামপন্থি লেবার পার্টি কনজারভেটিবদের ১৪ বছরের শাসনের ইতি ঘটিয়েছে। বৈশ্বিক গণতন্ত্র নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফ্রিডম হাউজ’। এ সংস্থার গবেষণা পরিচাক ইয়ানা গোরোখভস্কায়া বলেন, সবমিলিয়ে চলতি বছর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে বিরুদ্ধে কোনো চেষ্টা হয়নি। তবে রাশিয়া, ইরান ও ভেনেজুয়েলার নির্বাচনকে ‘ভুয়া’ দাবি করে গোরোখভস্কায়া বলছেন, বিদায়ী বছরে স্বৈরশাসকরা আরো দমনপীড়নমূলক হয়ে উঠেছে। ফ্রিডম হাউস বলছে, গত জানুয়ারি থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৬২টি নির্বাচনের এক চতুর্থাংশে ব্যালটবাকশে ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। এই সংখ্যা এতটা বেশি নয় যে গণতন্ত্র তার অবস্থান হারিয়েছে, এর মানে স্বৈরাচারের আরো খারাপ হয়েছে,’ বলেন গোরোখভস্কায়া।
১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখল করলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ পালিয়ে রাশিয়ায় চলে যান। ইসলামপন্থি হায়াত তাহরির আল-শাম দেশটির নেতৃত্বে রয়েছে। হায়াত তাহরির আল-শামকে পশ্চিমা অনেক দেশ ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে বর্ণনা করে। সেখানকার নতুন শাসকরা সহিষ্ণুতা ও আইনের শাসনের কথা বলেছেন। তবে তারা এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।