যুদ্ধের প্রস্তুতি ছাড়া ইউরোপে শান্তি অসম্ভব

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউরোপের নিরাপত্তা ক্রমেই একটি গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম দুটি কারণ হলো, ২০২৫ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে কৌশলগত সুবিধা অর্জন করবে, আর যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে ক্রমেই আরো স্বার্থপর হয়ে উঠবে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের বর্তমান নেতৃত্ব এতটাই দুর্বল ও অভ্যন্তরীণ সমস্যায় নিমজ্জিত যে তারা এই বিপজ্জনক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস কিংবা শক্তিশালী রাষ্ট্রের মতো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত, সুসংগঠিত পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। ২০২৫ সালে ইউরোপ যদি আরো বড় সংকট এড়াতে চায়, তবে এখনই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। শান্তি বজায় রাখতে, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা জরুরি।

সংকটের কেন্দ্রবিন্দু : বলা হচ্ছে, ইউরোপের এই দুরবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হলো ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্রমাগত অগ্রগতি শুধু সীমান্ত সংঘর্ষে সীমাবদ্ধ নয়। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ার ফলে ফ্রন্টলাইন ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিশ্চিতভাবে বুঝে গেছেন যে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে পর্যাপ্ত অর্থ কিংবা অস্ত্র সরবরাহ করতে রাজি নয়। পুতিন এটাও জানেন যে ইউরোপ ও ন্যাটোকে দুর্বল করার সুযোগ থাকলে তার কার্যক্রম আরো আক্রমণাত্মক হবে। যদি তিনি মনে করেন যে ন্যাটো বিভক্ত ও অকার্যকর, তাহলে ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলের স্থিতিশীলতা আরো নষ্ট করার চেষ্টা করবেন। পুতিন মনে করেন, ‘মহাশক্তি’ হিসেবে রাশিয়ার জায়গা পুনরুদ্ধার করতে ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও পশ্চিমা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা তার জন্য অপরিহার্য। আর ইউরোপের জন্য এমন পরিস্থিতি অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও, ইউরোপের নেতারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা তৈরি করতে পারছে না।

ঝুঁকি যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প : ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য আরো ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে মার্কিন মিত্রতা কেবল একটি চুক্তির মতো, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা প্রদানের বিনিময়ে কিছু অর্থনৈতিক বা সামরিক সুবিধা পায়। ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করতে পারেন, যেখানে ইউরোপের নেতাদের পাশ কাটিয়ে ইউক্রেনকে ভাগ করার মতো পদক্ষেপ থাকতে পারে। তার এই মনোভাব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে ও ন্যাটোর প্রতিশ্রুতিতে সন্দেহের সৃষ্টি করবে।

নেতৃত্ব ও সামরিক প্রস্তুতির অভাব : জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন সরকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত। ফ্রান্সের সরকারও দুর্বল, যেখানে রুশপন্থি মেরিন লে পেনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতাহীন লেবার সরকারও অভ্যন্তরীণ সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত। অথচ বিশ্ব যেদিকে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের শক্তি বৃদ্ধি প্রয়োজন। কিন্তু অস্ত্রের ঘাটতি ও কম বাজেটের কারণে ইউরোপের সামরিক প্রস্তুতি এখনো অপ্রতুল। এমনকি, তারা সবাই মিলে ইউক্রেনের পরাজয় ঠেকাতেও ব্যর্থ হয়েছে।