মক্কা-মদিনার সম্মান ও মর্যাদা

ড. মো. শাহজাহান কবীর

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদা ও সম্মানের স্থান। এ দুই স্থানে অবস্থিত পবিত্র কাবা শরিফ ও রাসুলে পাক (সা.)-এর রওজা শরিফ। রাসুলে পাক (সা.) এ দুই স্থানের সুস্পষ্ট ফজিলত ও মর্যাদা ঘোষণা করেছেন। হজ ও ওমরাহ উপলক্ষ্যে সারা বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম বছরব্যাপী এ দুই পবিত্র নগরীতে আসা-যাওয়া করেন। তাদের এ আসা-যাওয়ায় মক্কা-মদিনার ইজ্জত ও সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। মহান আল্লাহ মক্কার হারাম শরিফকে সম্মানিত ঘোষণা করে সুরা আলে ইমরানের ৯৬ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘এ কথা নিঃসন্দেহ যে, মক্কায় অবস্থিত ঘরখানাকেই সর্বপ্রথম মানুষের ইবাদতের ঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।’

মহান আল্লাহর এ ঘোষণা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, মক্কায় অবস্থিত মানুষের প্রথম ইবাদতখানা হওয়ার কারণেই তার এত মর্যাদা। এ ঘরের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা করে আল্লাহতায়ালা সুরা আলে ইমরানের ৯৭ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘উহাকে কল্যাণ ও মঙ্গলময় করে দেয়া হয়েছিল এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত লাভের কেন্দ্র বানানো হয়েছিল উহাতে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ রয়েছে।’ মক্কার হেরেমের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা রাসূলে পাক (সা.) এর উদ্দেশে সুরা নমল এর ৯১ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমাকে এ নির্দেশই দেয়া হয়েছে যে, এ শহরের রবের দাসত্ব করব যিনি একে মহিমান্বিত করেছেন, তিনি সব জিনিসের মালিকও বটে, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি মুসলমান হয়ে জীবনযাপন করি।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলে পাক (সা.) ঘোষণা করেন, নিশ্চয়ই আসমান জমিন সৃষ্টির দিনই আল্লাহ এই মক্কা নগরীকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং কেয়ামত পর্যন্ত তা সম্মানিত থাকবে।’ (মুসলিম) বায়তুল্লাহ শরিফে পৃথিবীর সব মুসলমানের সমানভাবে প্রবেশাধিকার রয়েছে। এখানে ধনী-গরিব, কালো-সাদা, উঁচু-নিচু, ফকির-বাদশা, মালিক-শ্রমিক, পুরুষ ও নারীর প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহকে একমাত্র রব ও মহানবী (সা.) কে তার রাসুল হিসেবে মেনে নেবে তিনিই হেরেমে প্রবেশের অধিকার লাভ করবেন। এ মর্মে সুরা হজের ২৫ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা কুফরি করেছে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিচ্ছে এবং মসজিদে হারামে যাবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে মসজিদে হারামকে আমি সব মানুষের জন্য তৈরি করছি এবং যেখানে স্থানীয় ও বহিরাগত লোকের অধিকার সমান, তাদের আচরণ নিশ্চিতভাবেই শাস্তি প্রদানের মতো আচরণ, যারা এতে (মসজিদে হারামে) সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে জুলুমের পথ ধরবে, আমি তাকে কঠিন শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাব।’ মক্কা শুধু মানুষের জন্য নিরাপদ নয়, এটা প্রতিটি প্রাণীর জন্যই নিরাপদ, কেবলমাত্র মানুষকে কষ্ট দেয় এমন পাঁচটি জীব ব্যতিরেকে। এ প্রসঙ্গে রাসুলে পাক (সা.) বলেন- হেরেমে কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও ক্ষেপা কুকুর এ পাঁচ প্রকারের জন্তুকে কেউ হত্যা করলে কোনো দোষ নেই। -সহিহ বোখারি : ১৬৯৬ এ হেরেমের সম্মানিত হবার মূল কারণ হলো- আল্লাহর ঘর যেখানে অবস্থিত সেখানে তার হুকুম বাস্তবায়নের কেন্দ্র হবে এবং সেখানে যেমন যাবতীয় অবৈধ কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে তেমনি এখান থেকে একমাত্র আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের প্রশিক্ষণ ও দীক্ষা তার বান্দাগণ লাভ করে তা বিশ্বময় প্রচার প্রসারে ভূমিকা গ্রহণ করবে। রাসূলে পাক (সা.) আল্লাহর দেয়া সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অবর্ণনীয় জুলুমণ্ডনির্যাতন সহ্য করেও শেষ পর্যন্ত জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় স্বীয় কর্মকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সুসম্পন্ন করেন। যে জায়গাটি আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের কর্মকেন্দ্র হয় তার মর্যাদা যে পৃথিবীর সকল স্থানের চেয়ে উত্তম হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। এ দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় মদিনার মর্যাদাকে আল্লাহতায়ালা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ মর্মে রাসূলে পাক (সা.)-এর একটি হাদিস এভাবে এসেছে, ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) মক্কাকে সম্মানিত ঘোষণা করেছিলেন এবং এর জন্য দোয়া করেছিলেন, সুতরাং হজরত ইবরাহিম (আ.) যেমন মক্কাকে সম্মানিত ঘোষণা করেছিলেন আমিও অনুরূপ মদিনাকে সম্মানিত ঘোষণা করলাম এবং মুদ ও সায়ের জন্য দোয়া করলাম যেমন হজরত ইবরাহিম (আ.) মক্কার জন্য করেছিলেন।’ (সহিহ বোখারি : ১৯৮১) নির্ভরযোগ্য হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কেয়ামতের আগ মুহূর্তে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও এ দুই নগরী মুক্ত থাকবে। ওই সময় ফেরেশতারা এই দুই নগরীর পাহারায় নিয়োজিত থাকবেন, ফলে দাজ্জাল সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্য দিকে রাসুলে পাক (সা.) মদিনার মর্যাদা ঘোষণা করে বলেন- ‘শুধু তিনটি মসজিদের উদ্দেশে সফর করা যাবে- আমার মসজিদ (মদিনার মসজিদে নববি), মক্কার মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আকসা (জেরুজালেম)।’ (মুসলিম)। রাসুলে পাক (সা.) বলেন, ‘আমার এ মসজিদে নামাজ আদায় অন্য মসজিদের হাজার নামাজের চেয়েও উত্তম। তবে মক্কার মসজিদে হারাম ছাড়া। কেননা, মক্কার মসজিদে হারামে নামাজ আদায় অন্য মসজিদের লক্ষ নামাজের চেয়ে উত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মক্কা ও মদীনার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানোর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ ও সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।