আরবি ভাষার প্রয়োজনীয়তা

তরিকুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বর্তমানে আরবি ভাষা একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আরবি চর্চা শুরু হয়েছে। জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাই তা শিখছে। আরবি ভাষা শ্রেষ্ঠ একটি ভাষা। আরবি ভাষা প্রচার-প্রসারের দিক থেকে পৃথিবীর পঞ্চম শ্রেষ্ঠ ভাষা। সব দেশেই দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আরবি ভাষাকে শিক্ষা দান করা হচ্ছে। এ জন্য পৃথিবীব্যাপী আরবি ভাষা শেখার এক জোয়ার চালু হয়েছে। ড. রফায়েল বাত্তি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো, পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা নেই, যা আরবি ভাষার সঙ্গে টক্কর দেবে; চাই ভাব প্রকাশের দিক থেকে হোক বা বোঝা ও অনুধাবনের দিক থেকে হোক।’ আরবি ভাষা সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভাষা। এ কথার স্বীকৃতি প্রাচ্যবিদরাও দিয়েছে। সুতরাং সব ভাষার মাঝে আরবি ভাষার রয়েছে সবচেয়ে উচ্চ ও উন্নত আসন।

কালজয়ী ভাষা আরবি

আরবি ভাষা কালজয়ী ভাষা। কালের প্রবাহ কখনও এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে ক্ষুণ্ন করতে পারেনি। এ ভাষা স্থিতিশীল ও গতিশীল। পৃথিবীর সব ভাষাতেই কোনো এক সময় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন; কিন্তু আরবি ভাষা আল্লাহতায়ালার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রয়েছে অপরিবর্তনীয় ও অবিকৃত। মানব সভ্যতাণ্ডসংস্কৃতি প্রচার-প্রসার ও জ্ঞান-বিজ্ঞান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরবি ভাষার রয়েছে বিরাট ভূমিকা ও অবদান। আর আরবি ভাষা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। এ বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো ভাষার নেই। এসব দিকে লক্ষ্য করে জাতিসংঘ ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে সাধারণ সভার ২৮তম অধিবেশনে আরবি ভাষাকে এর দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১২ সালে জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যতম সংস্থা (ইউনেস্কো) এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকেই বর্তমান বিশ্ব আরবি ভাষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুধাবন করতে শুরু করেছে। তাই ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরবি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

আরবি শেখার প্রয়োজনীয়তা

আরবি ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো- ১. আরবি ভাষা কোরআন-হাদিসের ভাষা। দ্বীন ইসলামের ভাষা এবং দ্বীন ইসলামের অংশ। রাসুল (সা.) এ ভাষায় কথা বলেছেন। আরবি ভাষার প্রচার-প্রসার দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসার। ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা আরবি শিক্ষা কর। কেননা, আরবি তোমাদের দ্বীনের অংশ।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা আরবি ভাষা শিক্ষা কর, তা জ্ঞান বৃদ্ধি করে।’ ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘আরবি ভাষা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। তা শিক্ষা করা আবশ্যক। কেননা, কোরআন-সুন্নাহ বোঝা আবশ্যক। আরবি বোঝা ছাড়া কোরআন-সুন্নাহ বোঝা যায় না। আর যার মাধ্যমে আবশ্যকীয় বিষয় জানা যায়, তা জানাও আবশ্যক।’ সুতরাং দ্বীনি দিক লক্ষ্য করে আরবি ভাষা শিখতে হবে। আর বর্তমান সময়ে সবাই তা শেখার জন্য অগ্রসর হচ্ছে।

২. কৌশলগত দিক থেকে আরবি ভাষা শিক্ষা করা প্রয়োজন। কেননা, আরবি ভাষা পৃথিবীর বিরাট অংশকে দখল করে আছে। সুতরাং আরবি ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা। ভৌগলিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

৩. আরবি ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ঐতিহ্যের বিরাট এক অংশ বহন করে আছে। ইতিহাস ও সভ্যতার দিক থেকে এটা প্রমাণিত যে, আরবি ভাষার মাধ্যমেই ইউনানি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের প্রচার-প্রসার হয়েছে জগতজুড়ে।

৪. আরবি ভাষা গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অন্য সব ভাষার তুলনায় শ্রেষ্ঠ। শব্দ, বাক্যগঠন প্রক্রিয়া অথবা উদ্দিষ্ট অর্থের ওপর পরিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে মনের ভাব ব্যক্ত করার সক্ষমতা সব দিক থেকেই আরবি ভাষা শ্রেষ্ঠ। এসব দিক লক্ষ্য করে বর্তমানে আরবি ভাষা শুধু মুসলমানরাই শিখছে এমন নয়, বরং ইহুদি-খ্রিস্টানরাও ব্যাপকভাবে শিখছে ও দক্ষতা অর্জন করছে।

৫. বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা বিভাগ রয়েছে। এর জন্য রয়েছে শিক্ষক। তাদের আরবি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরব দেশের ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আয়োজিত আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য পাঠানো হয়।

৬. বিভিন্ন সংস্থা, হাসপাতাল, অফিস-আদালতে আরবি অনুবাদকের প্রয়োজন হয়। তাদের কাজ-কর্ম আরবি ভাষায় অনুবাদ করতে হয়। এ জন্য দরকার দক্ষ আরবি মুতারজিম।

৭. পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে পড়াশোনার জন্য আসে। সেখানে তাদের ভর্তি হওয়া এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভের জন্য আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন জরুরি। কেননা, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষায় দক্ষ ছাত্রদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

৮. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য শ্রমিক, কর্মচারী ও ব্যবসায়ী মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে। কোম্পানি ও কারখানার মালিকরা আরবি ভাষায় দক্ষ লোকদের খোঁজে। যাদের আরবি ভাষায় মোটামুটি দক্ষতা রয়েছে, তারা ভালো বেতনে ভালো কাজ পেয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে যেসব শ্রমিক ও কর্মচারীর আরবি ভাষায় কোনো ধরনের যোগ্যতা ও দক্ষতা না থাকে, তারা বিভিন্ন রকম অসুবিধার মুখোমুখি হয়। ফলে তারা নানা শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতারিত হয়।

৯. আরব দূতাবাসে ভালো বেতনে চাকরির জন্য লোক খোঁজা হয়। এর জন্য আরবিতে দক্ষ ব্যক্তিদের প্রয়োজন। ইংরেজির পাশাপাশি কেউ যদি আরবিতেও দক্ষ হয়, তাহলে সেখানে উঁচু পর্যায়ের পদ পাওয়া যায়।

শেষ কথা

আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে পৃথিবীজুড়ে আরবি ভাষার শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলছে। আরবি ভাষায় সাহিত্যকর্ম যতটুকু হয়েছে, এর সাহিত্যমান যত ওপরে, এ স্তরে পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষা পৌঁছাতে পারেনি। এসব দিক লক্ষ্য করে বর্তমান বিশ্বে আরবি ভাষাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানুষ আরবি ভাষার প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুধাবন করে। অতএব, আরবি ভাষা শেখায় আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।