টেকসই অর্থনীতি ও ইসলাম
হাফেজ নাঈম উদ্দীন
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে যেমনিভাবে একটি মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তাদের সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপনের যাবতীয় প্রয়োজনের ব্যবস্থাও করেছেন এক রহস্যপূর্ণ পরিকল্পনা অনুসারে। এ কথার সত্যতা স্বীকার করে মনীষীরা বলেছেন, ‘প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণের উপকরণ রয়েছে পৃথিবীতে। এ জগতে যতগুলো সম্পদের অস্তিত্ব রয়েছে, তার প্রকৃত মালিক আল্লাহতায়ালা।’ পৃথিবীতে বিদ্যমান যে কোনো বস্তুর ওপর মানুষের মালিকানাও আল্লাহর দান। আবার উক্ত সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা পবিত্র কালামে বর্ণনা করা হয়েছে সবিস্তারে। যদি মানুষ তাদের অর্থনৈতিক জীবনে কোরআনে বর্ণিত মূলনীতিগুলো অনুসরণ করে, তাহলে তারা নিজের পার্থিব প্রয়োজন যথাযথভাবে মেটানোর পর তাদের আসল কাজে (অর্থাৎ ইবাদত ও আল্লাহকে রাজি-খুশি করার প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করতে পারবে)। যার জন্য তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, যদি তারা তা না মানে বা আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমাকে অতিক্রম করে, তাহলে তাদের পরকালের শাস্তি ছাড়াও দুনিয়াতে নিজের দোষের কারণে তাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে।
শাস্ত্রীয়ভাবে অনেক অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতিকে সম্পদের জ্ঞান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানব জীবনের প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে অর্থনীতির বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিবেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি- এরা এক ঘাটের তিন চাকার মতো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। একটি টেকসই অর্থনীতির জন্য প্রথমে দরকার তা টেকসই মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অর্থনীতির বিষয়গুলোকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো হয়েছে। অর্থনীতিকে যেন এ জীবনের পুরো অংশ মনে করা না হয়, এর জন্য একটা দিকনির্দেশনা থাকা চাই। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যেন নৈতিকতার পুরো অধ্যায়টি আবশ্যিকভাবে পালন করা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। সম্পদ উপার্জনের বৈধ পন্থাগুলোতে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়। অবৈধ পন্থাগুলো যেন নিষিদ্ধ করা হয়। সম্পদ বণ্টনের সম্পূর্ণ নীতিমালা থাকবে। সর্বোপরি যে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যার ও যোগ চাহিদার যথাযথ সমাধান যাতে সন্তোষজনকভাবে বিদ্যমান থাকে, এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা চাই। এটাই হলো টেকসই অর্থনীতির রূপরেখা।
এসব দিক বিবেচনা রেখে কোনো অর্থব্যবস্থা চালু করা বা প্রণয়ন করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অর্থনীতি এ জগতে দাবি করতে পেরেছে শুধু মহাগ্রন্থ আল কোরআন। সুন্দর ও টেকসই অর্থনীতির রূপরেখাটি আল কোরআনে বর্ণিত অর্থব্যবস্থাতেই পাওয়া যাবে। আর কোরআনের উক্ত মূল নীতিগুলোর সংক্ষিপ্তরূপ হলো আল কোরআনের ধারক মহানবী (সা.)-এর সেই মূলনীতিগুলো। তিনি শুধু বিস্তারিত বর্ণনা করেননি, বরং প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। আর বাকি কাজগুলো (যেমন- বিভিন্ন যুগে নতুন নতুন অর্থনৈতিক সমাচার ও সমস্যা সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি) উম্মতের মধ্যে নবীর যোগ্য উত্তরসূরিরা কোরআন-সুন্নাহর ইঙ্গিতের ওপর ভিত্তি করে তার যুগোপযোগী সমাধান দিয়েছেন। আর এ অর্থব্যবস্থাই হলো ইসলামি অর্থনীতি বা ইসলামি অর্থব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। সুতরাং আমাদের জন্য কল্যাণকর কোনো অর্থব্যবস্থা যদি পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান থাকে, তা হলো ইসলামি অর্থনীতি বা আল্লাহপ্রদত্ত অর্থব্যবস্থা।