সাহাবিদের দানশীলতা

রাসুল (সা.)-এর প্রিয় সাহাবিরা ছিলেন বড় দানবীর। তারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য, অভাবীদের অভাব দূর করতে ও ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ করতে দান করতেন। সচ্ছল-অসচ্ছল সর্বাবস্থায় দানের প্রতিযোগিতায় তারা ছিলেন অগ্রগামী। তাদের দানশীলতার কিছু নমুনা তুলে ধরেছেন- ইসমাঈল হুসাইন

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আবু বকর (রা.)-এর দানশীলতা

জায়েদ ইবনে আসলাম (রহ.) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, ওমর (রা.)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তাবুক যুদ্ধের সময় দান-সদকা করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেন। সৌভাগ্যক্রমে ওই সময় আমার সম্পদও ছিল। ভাবলাম, যদি কোনোদিন আবু বকর (রা.)-কে অতিক্রম করে যেতে পারি, তাহলে আজই সেই সুযোগ। ওমর (রা.) বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে এলাম। আর আবু বকর (রা.) ঘরের ঝাড়ু, চুলার ছাই থেকে নিয়ে ঘরের সব মালামাল গাট্টি বেঁধে নিয়ে এলেন। যখন আমাদের উভয়ের মাল রাসুল (সা.)-এর সামনে রাখা হলো, তখন দেখা গেল, আমার মাল অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে, আর আবু বকর (রা.)-এর মাল খুবই কম। তখন আমি খুব খুশি হলাম। কেননা, আজকের দানের ব্যাপারে আমি জিতে গেছি। কিন্তু না, রাসুল (সা.) সবকিছুই জানতেন। তাই তিনি জানতে চাওয়ার ধরন পাল্টে দিলেন। বললেন, ‘ওমর! তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য তুমি কী রেখে এসেছ?’ বললাম, ‘এর সমপরিমাণ সম্পদ।’ এরপর বললেন, ‘আবু বকর! তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য তুমি কী রেখে এসেছ?’ বললেন, ‘তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে রেখে এসেছি।’ এমন উত্তর শুনে ভাবলাম, আমি হয়তো কখনও আবু বকর (রা.)-কে অতিক্রম করতে পারব না। (তিরমিজি : ৩৬৭৫)।

ওমর (রা.)-এর দানশীলতা

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ওমর (রা.) খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন। বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি খায়বারে এমন ভালো কিছু জমি লাভ করেছি, যা এর আগে আর কখনও পাইনি। সুতরাং আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কী বলেন?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি চাইলে জমি ওয়াকফ করে উৎপাদিত ফসল সদকা করতে পার।’ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ওমর (রা.) এ শর্তে তা ওয়াকফ করেন যে, তা বিক্রি ও দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধিকারীও হবে না। তিনি জমি থেকে উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাস মুক্তি, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য খরচ করেন। (বোখারি : ২৭৩৭)।

ওসমান (রা.)-এর দানশীলতা

আবদুর রহমান (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ওসমান (রা.) অবরুদ্ধ হলে তিনি সাহাবিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আপনারা কি জানেন না যে, রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘যে ব্যাক্তি রুমার কূপটি খনন করে দেবে, সে জান্নাতি।’ আর আমি তা খনন করে দিয়েছি। আপনারা কি জানেন না যে, তিনি বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবুক যুদ্ধের সেনাদের সামগ্রীর ব্যাবস্থা করে দেবে, সে জান্নাতি।’ আমি তার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, ‘সাহাবিরা তার কথা সত্য বলে স্বীকার করলেন।’ (বোখারি : ২৭৭৮)।

কোরআনের বাণী- ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে একমাত্র মহান রবের জন্য নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো; যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)। এ আয়াতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ঘটনা আছে। তা হলো, আবু বকর (রা.)-এর খেলাফতকালে একবার দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। খাদ্যদ্রব্য একেবারেই দুর্লভ হয়ে পড়ে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কঠিন আকার ধারণ করে। সে সময় ওসমান (রা.)-এর প্রায় এক হাজার মণ গমের একটি চালান বিদেশ থেকে মদিনায় পৌঁছে। শহরের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী ওসমান (রা.)-এর কাছে এলেন। তারা তার সব গম ৫০ শতাংশ লাভে কেনার প্রস্তাব দিলেন। সেই সঙ্গে এ প্রতিশ্রুতিও দিলেন যে, তারা দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগণের দুর্দশা লাঘবের জন্যই এ গম কিনতে চায়। ওসমান (রা.) বললেন, ‘তোমরা যদি আমাকে এক হাজার গুণ লাভ দিতে পার, তবে আমি দিতে পারি। কেননা, অন্য একজন আমাকে সাতশত গুণ দিতে চেয়েছেন।’ ব্যবসায়ীরা বলল, ‘চালান মদিনায় আসার পর তো আমরাই প্রথম এলাম আপনার কাছে। তাহলে সাতশত গুণ লাভের প্রস্তাব কে কখন দিয়েছে?’ বললেন, ‘এ প্রস্তাব আমি আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছি। আমি এ চালানের সব গম বিনামূল্যে গরিবদের মাঝে বিতরণ করব। এর বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা আমাকে সাতশত গুণ বেশি পুণ্য দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ তখন ওসমান (রা.) কোরআনের উল্লিখিত আয়াতটি স্মরণ করিয়ে দিলেন।