ব্যবসা-বাণিজ্য আয়-উপার্জন ও জীবন-জীবিকা অন্বেষণের উত্তম একটি মাধ্যম। ইহ-পারলৌকিক সফলতা লাভেরও অন্যতম উপায়। এর দ্বারা স্বাবলম্বী ও প্রাচুর্যের অধিকারী যেমন হওয়া যায়, তেমনি বিরাট পুণ্য-প্রতিদানেরও হকদার হওয়া যায়। নবুওয়তের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার আগে রাসুল (সা.) উপার্জনের মাধ্যমরূপে এ পেশাটি গ্রহণ করেছিলেন। এ পেশায় নিয়োজিত থেকেই আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), ওসমান ইবনে আফফান (রা.)-সহ প্রমুখ সাহাবি শ্রেষ্ঠ ধনী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা
ইসলাম সর্বজনীন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি ইবাদত সম্পর্কে যেমন বিস্তারিত বিধি-বিধান বর্ণনা করেছে, তেমনি লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কেও উপহার দিয়েছে স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট ও আলোকিত দিকনির্দেশনা। এমনকি শিল্প-প্রযুক্তির কল্যাণে নতুন নতুন যত ব্যবসা ও ব্যবসাপদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে, তার ব্যাপারেও রয়েছে ইসলামের আলোক-ইশারা। বস্তুত এগুলোর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমেই একজন ব্যবসায়ী দুনিয়াবি লাভের সঙ্গে সঙ্গে পরকালীন সফলতাও অর্জন করতে পারে। তাই প্রত্যেক ব্যবসায়ীর উচিত, হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় ও আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। তাহলে পার্থিব এ ব্যবসাও হতে পারে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের অন্যতম মাধ্যম। রাসুল (সা.)-এর ভাষ্যমতে, ‘প্রকৃত বুদ্ধিমান সে-ই, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং পরকালের জন্য আমল করতে থাকে।’ (তিরমিজি : ২৪৫৯)।
সত্যবাদিতা
ইসলামের দৃষ্টিতে সফল ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য বিশেষভাবে যেসব বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, তা হচ্ছে কেনাবেচার সময় সর্বদা সত্য বলতে হবে এবং মিথ্যাকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। পণ্যে দোষ-ত্রুটি থাকলে স্পষ্টভাবে বলে দিতে হবে। এতে পণ্য কম বিক্রি হলেও আল্লাহতায়ালা বরকত দান করবেন। পক্ষান্তরে মিথ্যার আশ্রয় নিলে পণ্য হয়তো বেশি চলবে এবং পয়সাও হয়তো বেশি আসবে; কিন্তু তা হবে বরকতশূন্য। দেখা যাবে অনেক, কিন্তু কীভাবে যে শেষ হয়ে যাবে, তা টেরও পাওয়া যাবে না কিংবা এভাবে উপার্জিত সম্পদের দ্বারা মানসিকভাবে সুখ ও প্রশান্তি লাভ হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য ও সঠিক কথা বলো।’ (সুরা আহযাব : ৭০)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে যদি সত্য ও সঠিক কথা বলে, তাহলে তারা লেনদেনে বরকতপ্রাপ্ত হবে; পক্ষান্তরে লুকোচুরি করলে কিংবা মিথ্যার আশ্রয় নিলে তাদের বেচাকেনা হবে বরকতশূন্য।’ (বোখারি : ২০৭৯)।
ধোঁকা না দেওয়া
প্রযুক্তির এ চরমোৎকর্ষের যুগে ব্যবসার ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে এবং নিত্য নতুন পন্থা আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে ধোঁকা, প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার বাজারও হয়েছে সরগরম। সুযোগ পেলেই যেন সবাই সবাইকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাতে চায়। কিন্তু নববি আদর্শের ওপর অটল থাকতে হলে অবশ্যই দাগাবাজির এ ঘৃণ্য আচরণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; একদিন রাসুল (সা.) একটি খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তাতে হাত প্রবেশ করালেন এবং হাতে আর্দ্রতা অনুভব করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে খাদ্যশস্যের মালিক! এ কী অবস্থা?’ সে উত্তর দিলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাতে বৃষ্টির পানি পড়েছে।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তাহলে এই ভেজা অংশকে ওপরে তুললে না কেন, যাতে মানুষ তা দেখে নিতে পারে? যে ধোঁকাবাজি করবে, সে আমাদের দলভুক্ত হতে পারে না।’ (মুসলিম : ১০২)। অনেক ব্যবসায়ীর মুদ্রাদোষ হলো, কথায় কথায় মিথ্যা কসম করা। এটাও ধোঁকার শামিল। আবু যর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; একবার রাসুল (সা.) বললেন, ‘তিন শ্রেণির লোক এমন রয়েছে, আল্লাহ যাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, যাদেরকে পূতপবিত্র করবেন না এবং যাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা কারা? তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া তো অনিবার্য!’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘ওই ব্যক্তি, যে অনুগ্রহ ফলায়; যে টাখনুর নিচে লুঙ্গি-প্যান্ট ইত্যাদি ছেড়ে দেয় এবং ওই ব্যক্তি, যে মিথ্যা কসম খেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি করতে চায়।’ (তিরমিজি : ১২১১)।
দোষ গোপন না করা
যে কোনো পণ্য বিক্রি করার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই স্পষ্ট বলে দিতে হবে- পণ্যটি ভালো না মন্দ? ত্রুটিযুক্ত নাকি ত্রুটিমুক্ত? ত্রুটি থাকলে কী ধরনের ত্রুটি আছে? ইত্যাদি। কেননা, দোষ-ত্রুটি গোপন করে পণ্য বিক্রি করা সম্পূর্ণ হারাম। এর দ্বারা অচল পণ্যটি হয়তো সচল হবে এবং প্রাপ্যের অধিক মুনাফা লাভ হবে, কিন্তু এতে ক্রেতা হয় প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত এবং পরিণামে বিক্রেতাও হয় পাপী ও ক্ষতিগ্রস্ত। আয়-উপার্জনে বরকত থাকে না, মানসিক প্রশান্তি থাকে না; পরকালের ভয়াবহ শাস্তি তো আছেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সত্য ও অসত্যের মিশ্রণ ঘটিয়ো না এবং জেনে-বুঝে সত্যকে গোপন করো না।’ (সুরা বাকারা : ৪২)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। তাই কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের কাছে কোনো ত্রুটিযুক্ত পণ্য বিক্রি করবে, অথচ ত্রুটি সম্পর্কে তাকে অবহিত করবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৪৬)।
ওজনে কম না দেওয়া
হকদারকে যথাযথ হক পৌঁছে দেওয়া এবং ওজনে পূর্ণ করে দেওয়া ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। তাই আদর্শবান ব্যবসায়ী হতে হলে অবশ্যই ওজনে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। ওজনে ফাঁকি দেওয়ার দুষ্ট স্বভাব যাদের রয়েছে, তাদের ব্যাপারে বড় হুঁশিয়ারি এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বড় দুর্ভোগ রয়েছে তাদের জন্য, যারা কারচুপি করে; অন্যের থেকে মেপে নিলে পূর্ণ মাত্রায় নেয়, আর অন্যকে মেপে দিলে বা ওজন করে দিলে কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না- তাদের পুনরুত্থিত করা হবে এমন এক মহাদিবসে, যেদিন সব মানুষ সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১-৬)। ওজনে তো কম দেয়া যাবেই না, সম্ভব হলে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। রাসুল (সা.) সেই উপদেশই দিয়েছেন। সুয়ায়েদ ইবনে কায়েস (রা.) সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) একজন ওজনকারীকে নির্দেশ দিলেন, ‘ওজন কর এবং ঝুঁকিয়ে মেপে দাও।’ (তিরমিজি : ১৩০৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যখন তোমরা ওজন করবে, তখন পাল্লা ঝুঁকিয়ে ওজন করবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২২২)।
ক্ষতি নয়, উপকার
এভাবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় মন্দকে ভালো বলে এবং ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে বিক্রি করার এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রবণতা আজ অধিকাংশ ব্যবসায়ীর স্বভাব-দোষে পরিণত হয়েছে; যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। নবীজি (সা.) বলেন, ‘নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না, অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৩৪১)। মুসলমানদের উচিত, অন্যের কল্যাণ ও সাহায্য করার নিয়তে ব্যবসা করা। কারণ, তাতে উভয় জগতে জীবনের বাঁকে বাঁকে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মোমিনের পার্থিব বিপদ দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার একটি বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অসচ্ছল ব্যক্তির সঙ্গে সহজ ও সুন্দর আচরণ করবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে তার সঙ্গে সহজতর আচরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। বস্তুত আল্লাহতায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (মুসলিম : ২৬১১)।
স্নিগ্ধ ও মার্জিত আচরণ
স্নিগ্ধ, বিনম্র ও মার্জিত আচরণ যে কারও সঙ্গেই প্রশংসনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমার মধ্যে যদি চারটি গুণ থাকে, তাহলে দুনিয়ার কিছু খুইয়ে গেলেও তোমার কোনো ক্ষতি হবে না; চারটি গুণ হচ্ছে- আমানতের সংরক্ষণ, সত্য কথন, সুন্দর চরিত্র ও পবিত্র খাদ্য।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৬৫২)। তবে গ্রাহকের সঙ্গে উত্তম আচার-ব্যবহার আরও বেশি কল্যাণ বয়ে আনে, জনমনে আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে। ফলে অন্যদের তুলনায় তার দোকানেই থাকে ক্রেতাণ্ডখরিদ্দারের বেশি সমাগম। আর আখেরাতের পুণ্য ও প্রতিদান তো আছেই। তাই ব্যবসায়ীকে এদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, নরম নরম কথা বলতে হবে, মার্জিত আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। সম্ভব হলে বাকি চাইলে বাকি দিতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির প্রতি করুণা করেন, যে বেচাকেনার সময় এবং দাবি করার সময় নম্রতা ও উত্তম চরিত্রের পরিচয় দেয়।’ (বোখারি : ২০৭৬)। অপর এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি চায় আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি দান করুন, সে যেন অসচ্ছল পাওনাদারকে ছাড় দেয় কিংবা তার পাওনা ছেড়ে দেয়।’ (মুসলিম : ১৫৬৩)।
হারাম কায়-কারবার বর্জন
আল্লাহতায়ালা মদ, মৃত প্রাণী, রক্ত, প্রতিমা এবং শূকরের গোশত ইত্যাদি হারাম করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর-মাংস, আল্লাহ ছাড়া অপরের নামে জবাইকৃত পশু, শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে যা তোমরা জবাই করতে পেরেছ, তা ছাড়া; আর যা মূর্তি পূজার বেদীর ওপর বলি দেওয়া হয়, তা ও জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা- পাপ কাজ।’ (সুরা মায়িদা : ৩)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারণী তীর ঘৃণিত শয়তানি কাজ। তোমরা তা বর্জন কর, যাতে সফল হতে পার।’ (সুরা মায়িদা : ৯০)।
আল্লাহতায়ালা যেসব পণ্য হারাম করেছেন, সেসব পণ্যের ব্যবসাও হারাম করেছেন। সুতরাং যাবতীয় হারাম ও নিষিদ্ধ পণ্যের বেচাকেনা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি নবীজি (সা.)-কে মক্কা বিজয়ের বছর এবং মক্কা থাকাবস্থায় বলতে শুনেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মদ, মৃত দেহ, শূকর ও প্রতিমা বেচাকেনা হারাম করেছেন।’ তখন বলা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ ব্যাপারে কী মনে করেন যে, লোকেরা মৃত পশুর চর্বি দ্বারা নৌকায় প্রলেপ দেয়, তা দিয়ে চামড়ায় বার্নিশ করে এবং লোকেরা তা চকচকে করার কাজে ব্যবহার করে?’ তিনি বললেন, ‘না, তা হারাম।’ এরপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করে দেন; কারণ, মহান আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করেছিলেন, কিন্তু তারা একে গলিয়ে বিক্রি করত ও তার মূল্য ভক্ষণ করত।’ (বোখারি : ২২৩৬)।
আল্লাহর হকের কথা স্মরণ
ব্যবসা-বাণিজ্য নিঃসন্দেহে অর্থ উপার্জনের উত্তম মাধ্যম। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বেচাকেনার মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ততা যেন আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে গাফেল করতে না পারে এবং আল্লাহর বিধান পালনে উদাসীন করতে না পারে। বস্তুত একজন মুসলমানের উচিত, সে হাত-পা তথা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্য করবে আর অন্তর দ্বারা আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকবে এবং উঠতে-বসতে আল্লাহর গুণকীর্তন করবে। এমন যেন না হয় যে, একদিকে আজান হচ্ছে আর সে দু’টাকা উপার্জনের জন্য ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকছে; যা সত্যিই দুঃখজনক। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, কিন্তু আল্লাহর হক সব সময় আগে রাখতেন। আল্লাহর বিধান সামনে এলে ব্যবসা ছেড়ে তা পালন করতে উদগ্রীব হয়ে পড়তেন। কাতাদা (রা.) বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বেচাকেনা করতেন, কিন্তু যখনই আল্লাহর কোনো হক তাদের সামনে আসত, ব্যবসা-বাণিজ্য তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করতে পারত না। এমনকি তারা সে হকটি সঙ্গে সঙ্গে আদায় করতেন।’ (বোখারি : বেচাকেনা অধ্যায়)।
প্রথম সারির জান্নাতিদের সান্নিধ্য
ব্যবসা-বাণিজ্য স্খলন ও পদস্খলনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র। এ অঙ্গনে প্রবেশ করে যে কেউ হোঁচট খেতে পারে এবং বেশির ভাগ মানুষই হোঁচট খায়। তবে আল্লাহভীতি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এবং উপরিউক্ত ইসলামি নীতি-পদ্ধতির অনুসরণ করে ব্যবসা করলে যে কোনো ব্যবসায়ীর জন্য পদস্খলন থেকে বাঁচা সম্ভব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কেয়ামত দিবসে পাপিষ্ঠরূপে উপস্থিত করা হবে। তবে ব্যতিক্রম হবে তাদের অবস্থা, যারা আল্লাহভীতি, পুণ্য ও সত্যবাদিতার সঙ্গে ব্যবসা করবে।’ (তিরমিজি : ১২১০)। এমনকি সে পরকালে মর্যাদামণ্ডিত অবস্থা লাভ করতে পারে এবং লাভ করতে পারে প্রথম সারির জান্নাতিদের সান্নিধ্য-সংস্পর্শ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী থাকবে নবী, সিদ্দিক, শহিদদের সঙ্গে।’ (তিরমিজি : ১২০৯)।