প্রশ্ন : অসতর্কতাবশত কোরআন শরিফের সঙ্গে অসম্মানের আচরণ হলে কিংবা তেলাওয়াতের আগে-পরে স্বাভাবিকভাবে কোরআন শরিফে চুমু খেলে বা চোখে লাগালে কোনো সমস্যা হবে?
উত্তর : কোরআন শরিফে চুমু দেয়া জায়েজ আছে। ইকরিমা (রা.) সূত্রে কোরআন শরিফ চেহারায় লাগানো ও তাতে চুমু দেয়া প্রমাণিত। (সুনানে দারেমি : ৩৩৫৩)। তাই কেউ কোরআন শরিফে চুমু খেলে তাকে বারণ করার প্রয়োজন নেই। আবার অসতর্কতাবশত কোরআন শরিফের সঙ্গে অসম্মানজনক কিছু হয়ে গেলেও চুমু দিতে নিষেধ নেই। তবে তখন মূল করণীয় হলো, অসতর্কতার কারণে লজ্জিত হওয়া এবং তওবা-ইস্তিগফার করা। (মাজমাউয যাওয়াইদ :১৬০৪৯, আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩৮৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ১৭৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/৬০)।
প্রশ্ন : মসজিদে কোরআন শরিফের অনেক পুরোনো কপি জমা হয়ে যায়, যেগুলো পড়া যায় না। সেগুলোর ব্যাপারে করণীয় কী?
উত্তর : কোরআন শরিফের পুরোনো কপি যদি পড়ার অনুপোযুক্ত হয়ে যায়, তাহলে সম্ভব হলে পবিত্র কোনো কিছুতে রেখে কোনো স্থানে তা হেফাজত করে রাখবে। আর এভাবে হেফাজত করা কষ্টকর হলে, তা পরিষ্কার ও পবিত্র কাপড়ে পেঁচিয়ে এমন স্থানে দাফন করে দেবে, যেখানে সাধারণত মানুষ চলাচল করে না অথবা প্রবহমান পরিষ্কার পানিতে ভারী কোনো বস্তুর সঙ্গে বেঁধে ডুবিয়ে দেবে। (আল মুহিতুল বোরহানি : ৮/১০, আল বিনায়া : ১৪/৫৮০, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ১৮/৬৮, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩২৩, আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪২২)।
প্রশ্ন : কম্পোজম্যান সেজদার আয়াত টাইপ করার কারণে তার ওপর সেজদা ওয়াজিব হবে?
উত্তর : সেজদা ওয়াজিব হয় মুখে আয়াত তেলাওয়াত করার দ্বারা। তাই মুখে উচ্চারণ না করে টাইপ করলে তাতে তেলাওয়াতে সেজদা ওয়াজিব হয় না। (আল মুহিতুল বোরহানি : ২/৩৬২, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/১৮৪, ইমদাদুল ফাত্তাহ : ৫৩২, রদ্দুল মুহতার : ২/১০৩)।
প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে?
উত্তর : গোসল দেয়ার পর লাশের কাছে কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ। কিন্তু গোসল দেয়ার আগে মৃত ব্যক্তির কাছে কোরআন তেলাওয়াত করা মাকরুহ। তবে মৃতের গোসলের আগে দূরে কোথাও (যেমন- অন্য ঘরে) মৃতের ইসালে সওয়াবের নিয়তে কোরআন তেলাওয়াত করাতে অসুবিধা নেই। (তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৫৬৪, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৭১, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৫৯৭, রদ্দুল মুহতার : ২/১৯৪)।
প্রশ্ন : মোবাইলের ভেতর কোরআন শরিফ রাখা বা পড়া এবং তা সঙ্গে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া জায়েজ হবে?
উত্তর : মোবাইলে বা এর মেমোরিতে কোরআন শরিফ সংরক্ষণ করা এবং এখান থেকে দেখে তেলাওয়াত করা জায়েজ। তবে মোবাইলের স্ক্রীনে কোরআন শরিফের আয়াত বা কোনো পৃষ্ঠা খুললে তার যথাযথ মর্যাদা বজায় রাখতে হবে। লিখিত অংশ বিনা অজুতে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর মোবাইল স্ক্রীনে কোরআন শরিফের আয়াত দৃশ্যমান না থাকলে তা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে। কিন্তু স্ক্রীনে কোনো আয়াত দৃশ্যমান থাকলে তা খোলা অবস্থায় টয়লেটে নিয়ে যাওয়া জায়েজ হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/১৭৮)।
প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় এ কথা প্রসিদ্ধ যে, যদি কোনো ব্যক্তির হাত থেকে অনিচ্ছায় ও ভুলবশত কোরআন শরিফ পড়ে যায়, তাহলে তা ওজন করে চাল বা গম ইত্যাদি সদকা করতে হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি কেমন?
উত্তর : কোরআন শরিফ হাত থেকে পড়ে গেলে তা ওজন করে চাল বা গম দেয়ার কোনো বিধান শরিয়তে নেই; বরং সদকা দেয়ার উদ্দেশেও এ ক্ষেত্রে কোরআন শরিফ ওজন করা এক ধরনের বেআদবি। কখনও অনিচ্ছাকৃত এমনটি হয়ে গেলে আল্লাহতায়ালার দরবারে ইস্তিগফার করে নেবে। তবে কোরআন শরিফ ওজন না করে কেউ এমনিতেই কোনো কিছু সদকা করতে চাইলে তাতে অসুবিধা নেই। (ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/৬০)।
প্রশ্ন : কোরআন শরিফের কোনো সুরা বা আয়াত মোবাইল সেট বা আইপ্যাডের স্ক্রীনে লেখা থাকলে তা অজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে?
উত্তর : মোবাইলে বা আইপ্যাডের স্ক্রীনে কোরআনের সুরা বা আয়াত দৃশ্যমান থাকলে আয়াতের ওপর অজু ছাড়া স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে স্ক্রীনের যে অংশে আয়াত লেখা থাকবে না, সে অংশে হাত লাগাতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার : ১/১৭৩, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ৭৭)।