ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হারামে ভালো কাজ মূল্যহীন

ইসমাঈল হুসাইন
হারামে ভালো কাজ মূল্যহীন

আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে হালাল উপার্জন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা : ১৬৮)। সুতরাং যেভাবে উপার্জন ও খাবার বৈধ হতে হবে, তেমনি দান করার ক্ষেত্রেও হালাল উপার্জন থেকে দান করতে হবে। কেননা, আল্লাহতায়ালা শুধু পরহেজগার ও নেককারদের পক্ষ থেকে কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘অবশ্যই আল্লাহতায়ালা মুত্তাকিদের পক্ষ থেকে কবুল করেন।’ (সুরা মায়িদা : ২৭)।

উপার্জিত অর্থ ব্যয়ে ইসলামের নীতি

উপার্জিত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি হলো, প্রথমে নিজের ও নিজের পরিবার-পরিজনের ব্যয়ভার বহন করবে। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলে দুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য খরচ করবে। কিন্তু যদি কারও হালাল উপার্জন থেকে নিজের ও পরিবারের জন্য ব্যয় করার পর তার আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে তার জন্য গরিব-অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করা জরুরি নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল!) মানুষ আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, যা কিছু অতিরিক্ত ও উদ্বৃত্ত। এভাবে আল্লাহ তাঁর বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন; যাতে তোমরা চিন্তা কর।’ (সুরা বাকারা : ২১৯)।

হারাম অর্থ ব্যয় করলে কবুল হয় না

হারাম সম্পদ থেকে অর্থ ব্যয় করলে তা কবুল হবে না। কেননা, আল্লাহতায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তু কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্র; তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রেরিত রাসুলদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, মোমিনদেরও সে আদেশ করেছেন।’ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভালো কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবগত।’ (সুরা মোমিনুন : ৫১)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যারা ঈমান এনেছ, আমি তোমাদের যেসব পবিত্র জিনিস রিজিক হিসেবে দিয়েছি, তা থেকে খাও।’ (সুরা বাকারা : ১৭২)। এরপর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, সে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ্ম কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, ‘হে আমার রব!’ অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া তিনি কী করে কবুল করতে পারেন? (মুসলিম : ২২৩৬)।

অবৈধ উপার্জনের জন্য জবাব দিতে হবে

হারাম সম্পদ থেকে অর্থ ব্যয় করলে পরকালে এর সুফল পাওয়া যাবে না। কেননা, এটি এক ধরনের প্রতারণা। ইসলামের দৃষ্টিতে ধোঁকাবাজি বা প্রতারণা করা কবিরা গোনাহ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আমাদের ধোঁকা দেয়, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসলিম : ১০১)। হারাম উপার্জন করা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং কেউ যদি প্রতারণার মাধ্যমে কারও অর্থ আত্মসাৎ করে, তাহলে তার অপরাধ তিনটি। যথা- ১. প্রতারণা ও অনৈতিক কাজ; ২. অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস, যা হক্কুল ইবাদ বা মানুষের অধিকার হরণের শামিল; ৩. প্রতারণা করার মাধ্যমে দেশের আইন লঙ্ঘন। আর অবৈধ উপার্জনের জন্য অবশ্যই কেয়ামতের দিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন কোনো মানুষ নিজের স্থান থেকে এক বিন্দুও সরতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে চারটি প্রশ্নের জবাব নিয়ে নেয়া হবে। তার একটি প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে?’ (তিরমিজি : ২৪১৭)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত