ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাদিসের গল্প

দান-প্রতিদান

নিয়ামুল ইসলাম
দান-প্রতিদান

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, একবার তিন ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলছিল। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলো। তারা কোনো এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করল। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তাদের এমন করুণ অবস্থা দেখে একজন বলল, ‘এর থেকে বাঁচার জন্য তোমরা যেসব আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম আমলের ওসিলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া কর।’

তাদের একজন বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার অতি বৃদ্ধ পিতামাতা ছিলেন। আমি রোজ ভোরে মেষ চরাতে বেরুতাম। বাড়ি ফিরে দুধ দোহন করতাম। তা নিয়ে আমার পিতামাতার কাছে উপস্থিত হতাম। তারা তা পান করতেন। তারপর আমি স্ত্রী-সন্তানদের পান করাতাম। এক রাতে আমি আটকা পড়ে যাই। এরপর আমি যখন ফিরে এলাম, তখন তারা দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার কারণে চিৎকার করছিল। এ অবস্থায় আমার এবং পিতামাতার ফজর হয়ে গেল। হে আল্লাহ! তুমি যদি জান, তা আমি শুধু তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম, তাহলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁকা করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি।’ বর্ণনাকারী বলেন, তখন গুহার মুখ একটু ফাঁকা হয়ে গেল।

আরেকজন বলল, ‘ইয়া আল্লাহ! তুমি তো জান, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে খুব ভালোবাসতাম; যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে ভালোবেসে থাকে। এরপর আমি যখন তার কাছে গেলাম, সে বলল, তুমি আমার থেকে সে মনস্কামনা সিদ্ধ করতে পারবে না, যতক্ষণ তুমি আমাকে একশত দিনার না দেবে। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। এরপর আমি যখন তার দু’পায়ের মাঝে উপবেশন করি, তখন সে বলল, আল্লাহ?কে ভয় কর। বৈধ অধিকার ছাড়া মহরকৃত বস্তুর সীল ভাঙবে না। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়লাম। হে আল্লাহ! তুমি যদি জান, আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করেছি, তাহলে তুমি এ গুহার মুখ আরও একটু ফাঁকা করে দাও।’ বর্ণনাকারী বলেন, তখন গুহার মুখের দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁকা হয়ে গেল।

আরেকজন বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি জান যে, এক ফারাক পরিমাণ শস্যদানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। অতঃপর আমি তার এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু কিনি ও রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার পাওনা বুঝিয়ে দাও। আমি তাকে বললাম, এই রাখাল ও গরুগুলো তুমি নিয়ে যাও। সে বলল, তুমি কি আমার সঙ্গে উপহাস করছ? আমি বললাম, আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করছি না; বরং এসব কিছু তোমারই। এরপর সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ?! তুমি যদি জান, আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশে করেছি, তবে তুমি আমাদের হতে গুহার মুখ উন্মুক্ত করে দাও।’ তখন তাদের গুহার মুখ উন্মুক্ত হয়ে গেল। (বোখারি : ২২১৭)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত