প্রতিদিনই সারা দেশে সহস্র গাথা রচিত হয়। পথ চলতি এসব গল্প পথের ধারেই পড়ে থাকে বেশির ভাগ সময়। কার এত সময় আছে, সেগুলো কুড়িয়ে মালা গাঁথবে। এসব গল্পের সবটা তো বলার মতোও নয়। তবে যাদের আগ্রহ আছে, তারা খড়ের গাদায়ও সুঁই খোঁজে। রায়হান রাশেদ তেমনই একজন। অন্যরা হয়তো আমলেই নেবে না কিংবা হাসি-ঠাট্টায় উড়িয়ে দেবে, এমন সব ঘটনা তিনি খুঁজে ফেরেন হাটে-মাঠে-ঘাটে; তারপর সেগুলো রত্ন ভেবে যত্ন নিতে থাকেন। ফলাফলে ধুলোর আবরণ যায় খসে, বেরিয়ে আসে মুক্তো। এটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ, এতে ধৈর্য লাগে, আরও লাগে বিনয়। রায়হান সবাইকে সম্মান করতে পারেন বলে অনেকেই তাকে প্রাণের কথা, মনের কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। রায়হানের হাতও খোলা, লেখায় তিনি অনুভব ফুটিয়ে তুলতে পারেন, আবেগ যোগ করতে পারেন। তাই পাঠক গল্পটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকেন।
‘যারা দীপ জ্বেলে যায়’ বইয়ে রায়হান পরার্থে জীবন পার করছেন এমন মানুষদের গল্পই বলেছেন। খুব ব্যস্ত আজকের বাজারকেন্দ্রিক সমাজে এসব মানুষ কমছে দ্রুত। তাই তাদের কথা বলে রাখাও জরুরি। এ কাজটি করে রায়হান যথার্থই ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত হয়েছেন। এ বইয়ে এমন সব মানুষদের নিয়ে ফিচার লেখা হয়েছে, যাদের কেউ বিনামূল্যে ১২ বছর ধরে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন, কেউ ৬০ বছর ধরে মানুষকে বই পড়তে দিচ্ছেন আর সংগ্রহ করেছেন অমূল্য রতন, কেউ ইতিহাসের সন্ধানে এক জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, কেউ পথশিশুদের সঙ্গে জীবনের সংসার পেতেছেন কিংবা বিনামূল্যে দিয়েছেন ৩৫ হাজার বই। কেউ কোভিড-১৯ এ জীবনবাজি রেখে দাফন করেছেন মরদেহ। হাত নেই, পায়ে লিখে পড়াচ্ছেন কেউ। কেউ আবার অন্ধ হয়েও হাফেজ তৈরির কারখানা গড়েছেন কিংবা সংগ্রামী জীবন শেষে এনেছেন সফলতা বা উস্তাদ ছাড়াই ছুঁয়ে ফেলেছেন স্বপ্নের মসনদ।