ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ

খতিব, কাজী ফিরোজ রশিদ জামে মসজিদ, ঘাঘর বাজার, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ
মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ

প্রশ্ন : পরিত্যক্ত পুরোনো মসজিদের স্থানে পাঠাগার করা যাবে?

উত্তর : না, জায়েজ হবে না। কেননা, যা একবার শরয়ি মসজিদে পরিণত হয়, তা কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই বাকি থাকে। কোনো মসজিদকে পরিত্যক্ত করাও বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি আবশ্যকীয় কোনো কারণে মসজিদটি অনাবাদ হয়ে পড়ে, তাহলে উক্ত মসজিদের চৌহদ্দিকে দেয়াল বা বেড়া দিয়ে আটকে দিতে হবে। যাতে বোঝা যায়, এটি সম্মানিত স্থান মসজিদ ছিল। উক্ত স্থানকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা কখনোই জায়েজ হবে না। (ফতোয়ায়ে শামি : ৬/৫৪৭)।

প্রশ্ন : মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জমির ওপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তা বড় করতে মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এটা করা যাবে?

উত্তর : না, এটি জায়েজ হবে না। কারণ, যে স্থান একবার মসজিদ হয়ে যায়, তা কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই বাকি থাকে। মসজিদকে রাস্তায় পরিণত করলে মসজিদের সম্মান বিনষ্ট হবে। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ২/৪৫৬-৪৫৭, ফতোয়ায়ে শামি : ৬/৫৭৪ ও ৭৫৬, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া :৫/৮৪১-৮৪২, আল বাহরুর রায়েক : ৫/৪২৮) ।

প্রশ্ন : আমাদের মহল্লায় দু’টি মসজিদে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মহল্লার সব মুসল্লির জন্য দু’টি মসজিদই যথেষ্ট। কিন্তু জনৈক দাতা মহল্লার একটি জুমা মসজিদের ২০০ গজের মধ্যে তৃতীয় একটি পাঞ্জেগানা মসজিদকে জুমার মসজিদে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বাহ্যত বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু এতে পার্শ্ববর্তী মসজিদের জুমার জামাতে মুসল্লি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায়, তার জন্য উক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুযোগ আছে?

উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নতুন মসজিদকে জুমার মসজিদে রূপান্তর না করাই উত্তম। কেননা, কোনো মহল্লায় একাধিক মসজিদ থাকলেও কোনো এক বা একাধিক বড় মসজিদে সবাই একত্রিত হয়ে বড় জামাতে জুমার নামাজ পড়া উত্তম। বড় জামাতে পড়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ছোট ছোট জামাতে জুমা আদায় করা অনুত্তম। যদিও একই মহল্লার একাধিক মসজিদে জুমার জামাত করা জায়েজ আছে। (আল মাবসুত লিস সারাখসি : ২/১২০, শরহুল মুনয়া : ৫৫১, ফাতহুল কাদির : ২/১৫, ইলাউস সুনান : ৮/৯১)।

প্রশ্ন : মসজিদ সম্প্রসারিত করা দরকার। তাই মসজিদেরই ওয়াকফকৃত জমি (যেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করা হবে), সেখানে তিনটি কবর রয়েছে। তিনটির শেষের কবরটির বয়স আট বছর। কবরওয়ালাদের পরিবার মসজিদ সম্প্রসারণের কথা শুনে কবর থেকে মাটি ও হাড্ডি তুলে নিয়ে অন্যস্থানে দাফন করেছে। উক্ত কবরের জায়গায় মসজিদ সম্প্রসারণ করা যাবে কী? অনেকে বলেন, কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে নামাজ পড়া শিরক। কথাটি কতটুকু সঠিক? তা ছাড়া কবর কতদিনের পুরোনো হলে তার ওপর প্রয়োজনে বাড়ি, মসজিদ বা সড়ক নির্মাণ করা যায়?

উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরগুলো যেহেতু স্থানান্তর করা হয়েছে এবং এখন সেখানে কবর নেই, আর ওই জায়গাটি মসজিদেরই, তাই জায়গাটি সমান করে দিয়ে সেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আর মসজিদ সম্প্রসারণ করে মসজিদের ভেতর কবর রেখে দেওয়া কোনোভাবেই জায়েজ নয়। আর কবরকে সরাসরি সেজদা করা শিরক। এমনিভাবে মসজিদের ভেতর কবর থাকলে কবরকে সামনে রেখে নামাজ পড়া হারাম। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সেখানে যেহেতু কবর নেই, তাই সেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করলে এসব প্রশ্ন আসে না। প্রকাশ থাকে যে, কবরের জায়গা যদি ওয়াকফকৃত না হয়, বরং ব্যক্তি মালিকানাধীন হয় এবং কবর এত পুরোনো হয় যে, লাশ মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয়, তাহলে ওই কবরের চিহ্ন সমান করে এর ওপর বাড়ি-মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে। কেননা, লাশ মাটি হয়ে গেলে তা আর কবরের হুকুমে থাকে না। (তাবয়িনুল হাকায়েক :১/৫৮৯, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ৩৩৬, উমদাতুল কারি : ৪/১৭৪, আল বাহরুর রায়েক : ২/২১০, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৬৭, রদ্দুল মুহতার : ২/২৩৩, ইমদাদুল আহকাম : ৩/২৮৬)।

প্রশ্ন : ওয়াকফকারীর নামে মসজিদের নামকরণের হুকুম কী?

উত্তর : মসজিদের জন্য জমি দিয়ে বা এর নির্মাণ কাজে সহায়তা করে নিজের নামে নামকরণ করা ঠিক নয়। কারণ, এটা রিয়া বা লৌকিকতার নিদর্শন। আর রিয়া সম্পূর্ণ হারাম। এর দ্বারা দানের সওয়াব একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য এভাবে কোনো মসজিদের নাম রাখা হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদ হয়ে যাবে এবং সেখানে নামাজও সহিহ হবে। মসজিদ হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয় নিয়ে আপত্তি করা ও জনমনে সংশয় সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। (উমদাতুল কারি : ৪/১৫৮, ২১৩, আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪২৫, ইমদাদুল আহকাম : ৩/২৫৮)।

প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় ঈদগাহের জন্য একটি জায়গা ওয়াকফ করা হয়। পরবর্তীতে তার কিছু জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেই স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা ঠিক হয়েছে কী? সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজ আদায় করা সঠিক হবে? যদি মসজিদ নির্মাণ এবং পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজ আদায় করা সঠিক না হয়, তাহলে করণীয় কী?

উত্তর : প্রশ্নোল্লিখিত জায়গাটি যেহেতু ঈদগাহের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে, তাই পুরো জায়গাটি ঈদগাহের জন্যই মুক্ত রাখতে হবে। সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ হয়নি। অতএব, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্তব্য হলো, ঈদগাহের জায়গা থেকে মসজিদটি সরিয়ে পুরো জায়গাটা ঈদগাহের জন্য খালি করে দেয়া। এ ক্ষেত্রে আশপাশে যদি মসজিদের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে এলাকাবাসী উপযুক্ত জায়গার ব্যবস্থা করে মসজিদ নির্মাণ করবে। আর উক্ত স্থানে আদায়কৃত এতদিনের ওয়াক্তিয়া ও জুমার নামাজ সহিহ হয়েছে। সেগুলো পুনরায় আদায় করতে হবে না। উল্লেখ্য, ওয়াকফ শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। ওয়াকফকারী যে স্থানকে যে খাতের জন্য নির্ধারণ করেন, সে খাতেই তা ব্যবহার করতে হবে। ভিন্ন খাতে ব্যবহার করা যাবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ২/৪৯০ ও ৪৭০, আল মুহিতুল বোরহানি : ৯/১৪৫, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৮/১৮৯, রদ্দুল মুহতার : ৪/৪৪৫)।

প্রশ্ন : আগে যে জায়গা মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে বা বর্তমান মসজিদের পশ্চিম পাশে অজুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করা জায়েজ হবে?

উত্তর : বর্তমানে যে জায়গায় মসজিদ আছে, সেখানে মসজিদ ছাড়া অজুখানা, টয়লেট বা অন্য কিছু বানানো জায়েজ হবে না। ওই স্থানকে মসজিদ হিসেবেই রাখতে হবে। মসজিদের পশ্চিমে যে জায়গা আছে, তার একাংশে অজুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করা যাবে। চাইলে বাকি অংশে মসজিদও সম্প্রসারণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অজুখানা ও টয়লেট এভাবে বানাতে হবে, যাতে পরিবেশ পূর্ণ পরিচ্ছন্ন থাকে এবং মুসল্লিদের কোনো কষ্ট না হয়। (ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়্যা : ৩/২৮৫, আল বাহরুর রায়েক : ৫/২৫১, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৪২৪, মাজমাউল আনহুর : ২/৫৯৫, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩১৯, আদ্দুররুল মুখতার : ৪/৩৫৮)।

প্রশ্ন : ঈদগাহের জন্য ওয়াকফকৃত জমিতে খেলাধুলা করা বা সামাজিক কোনো আচার-অনুষ্ঠান করা জায়েজ হবে?

উত্তর : ঈদগাহের জন্য ওয়াকফকৃত জমিতে দুই ঈদের নামাজ ও দ্বীনি কাজকর্ম ছাড়া অন্য কোনো কাজ (যেমন- খেলাধুলা, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন) করা জায়েজ নেই। সুতরাং ঈদগাহকে খেলাধুলা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখা আবশ্যক। (রদ্দুল মুহতার : ১/৩৫৭, আল বাহরুর রায়েক : ৫/৪১৭, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ : ৪/১২২)।

প্রশ্ন : আমার দাদা তার জীবদ্দশায় আমাদের বাড়ি সংলগ্ন একটি জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে যান। এতদিন তা মসজিদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইদানিং আমরা বাড়িতে একটি বিল্ডিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে ওই জমিটির একাংশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা চাচ্ছি, সমমূল্যের আরেকটি জমি দিয়ে উক্ত জমিটি পরিবর্তন করতে। এরূপ করা জায়েজ হবে?

উত্তর : কোনো প্রয়োজনেই মসজিদের ওয়াকফকৃত ভূমি পরিবর্তন করা জায়েজ হবে না। মসজিদের জায়গা এভাবে পরিবর্তন করা যায় না। (ফতোয়ায়ে খানিয়া : ৩/৩০৭, আল বাহরুর রায়েক : ৫/২২২, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ২/৪০১, আল ইসআফ : ৩২, রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৮৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত