ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা) টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : লুডু খেলার শরঈ বিধান কী?

উত্তর : লুডু বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি খেলা। বিশেষ করে, বর্তমানে মোবাইল অ্যাপস ইত্যাদির মধ্যে এ খেলা অন্তর্ভুক্ত করে দেয়ায় তা বিশ্বব্যাপী আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে। এটি নতুন কোনো খেলা নয়, বরং বহু প্রাচীন খেলা। শব্দটি হলো চধৎপযরং-এর রূপ। আর চধৎপযরং ও পাশা হুকুমগত দিক থেকে একই ধরনের খেলা। কেননা, হাদিসে পাশার কথা উল্লেখ করা হলেও শ্রেণিগত দিক দিয়ে এগুলো সব একই রকম। আল্লামা সালেহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, লুডু খেলা, পারসিস খেলা, যা পাশা খেলার অনুরূপ, তা একই রকম। আর বিষয়টি যেহেতু এমনই, তাই লুডু খেলাও পাশা খেলার মতো হারাম। কেননা, শরিয়তের মূল দাবি হলো- হাকিকত ও বাস্তবতা, নাম ও শব্দের ভিন্নতা মূল বিবেচ্য বিষয় নয়। আর নারদ বা পাশা খেলা সম্পর্কে হাদিসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন- রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাশা খেলল, সে যেন শূকরের গোশত ও রক্তে হাত মাখাল।’ (মুসলিম : ২২৩০)। নারদেশীরের অর্থ হলো- পাশা। আর পাশা বলা হয় ওই গুটিকে, যাতে অক্ষরের সাহায্যে কিংবা দাগের মাধ্যমে এক থেকে ছয় পর্যন্ত লেখা হয়। সহজে যাকে ছক্কার গুটি বলে। আর এ পাশা বা ছক্কা দিয়ে যত ধরনের খেলা আছে, তার সবই হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, উল্লিখিত হাদিসটি ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমামদের পক্ষে এ কথার দলিল যে, পাশা বা ছক্কার গুটি দিয়ে যত ধরনের খেলা হয়, তার সবই হারাম। (শরহে নববি : ১৫/১৫)। আল্লামা ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেন, মোটকথা হলো- পাশা ও ছক্কার গুটি দিয়ে খেলাধুলা করা হারাম। এ থেকে কোনো ওয়াক্ত ব্যতিক্রম নয়। চাই নামাজ থেকে গাফেল রাখুক বা না রাখুক কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিমুখ রাখুক বা না রাখুক। কেননা, হাদিসে নিঃশর্তভাবে হারাম বলা হয়েছে। (আত তামহিদ : ১৩/১৭৫)। শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, পাশার দান বা গুঁটি দিয়ে খেলা করা হারাম। চাই কোনো বিনিময়ে হোক অথবা বিনিময় ছাড়া হোক। কেননা, রাসুল (সা.) নিঃশর্তভাবে বলেছেন, ‘যারা পাশা দিয়ে খেলা করে, তারা আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে। তা ছাড়া পাশা জাতীয় বস্তুর খেলার কারণে খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়।’ (মাজমুআতুল ফাতাওয়া : ৩২/২৫৩)। শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ উপসংহারে বলেন, মোটকথা হলো- লুডু খেলা হারাম, চাই জুয়ার বিনিময় ছাড়াই হোক না কেন।’

প্রশ্ন : আমাদের গ্রামে মাঝে মাঝে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। কখনও আমাদের গ্রামেরই দু’দলের মাঝে, কখনও অন্য গ্রামের দলের সঙ্গে। খেলা শুরুর আগেই প্রত্যেক খেলোয়াড় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখে। খেলায় যে দল বিজয়ী হয়, সেই দলকে পূর্ণ জমা টাকা দিয়ে দেয়া হয়। সবার সম্মতিতেই এটি হয়। খেলার এ পদ্ধতিটি কি নাজায়েজ?

উত্তর : অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের থেকে টাকা নিয়ে তা বিজয়ী দল বা ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়া নাজায়েজ। এটি এক ধরনের জুয়া। তাই তা নাজায়েজ। তবে প্রতিযোগীদের বাইরের কেউ যদি বিজয়ী দল বা অন্য কাউকে পুরস্কারস্বরূপ কোনো কিছু দেয়, তবে এ পুরস্কার দেয়া ও গ্রহণ করা জায়েজ হবে। প্রকাশ থাকে যে, মুসলমানদের খেলাধুলা তথা শরীরচর্চা ও বিনোদন অবশ্যই শরিয়তসম্মত পন্থায় হওয়া আবশ্যক। তা না হলে সে খেলায় কোনোভাবেই পুরস্কার দেয়া বৈধ নয়। কেননা, এতে নাজায়েজ কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়। (সুরা মায়িদা : ৯০, তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/১৪৬, শরহু মুখতাসারিত তহাবি : ৭/৩৬৯, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৩৭৮, তাবয়িনুল হাকায়েক : ৭/৭১, আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪০২)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত