রমজানে দানের অপার গুরুত্ব
তাবাসসুম মাহমুদ
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলামে দান-সদকা ও অন্যকে সহযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। আর রমজানে দানের গুরুত্ব আরও বেশি। এ মাসকে দানের মাস বলা হয়। কেননা, এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজের সমান সওয়াব; আর একটি ফরজ ইবাদত করলে ৭০টি ফরজের সওয়াব দেয়া হয়। অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে বিপুল সওয়াব লাভের সর্বোত্তম সময় এ রমজান মাস। অনেক গরিব-দুঃখী আছে, যারা সাহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খায়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তাদের দুঃখটা খানিক বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া ঈমানি কর্তব্য। মাহে রমজান মানুষকে দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা ও মহত্তের শিক্ষা দেয়। কোনো প্রকার অপচয় না করে রোজার মাসে মানুষের সেবায় দান-সদকা করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয় এবং মানবতা উপকৃত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদের পাক-পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন।’ (সুরা তওবা : ১০৩)।
রমজানে রাসুল (সা.)-এর দানশীলতা
রাসুল (সা.) রমজানে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত, যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। রাসুল (সা.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। (বোখারি : ৬, মুসলিম : ২৩০৮, মুসনাদে আহমদ : ২৬১৬)।
রমজানের বিশেষ অফার
রমজানে প্রতিটি ভালো কাজের নেকি ৭০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসে যত বেশি দান-সদকা করা যাবে, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। রাসুল (সা.) তার প্রিয় উম্মতকে রমজান মাসে বেশি পরিমাণে দান করতে উৎসাহিত করতেন। রমজান মাসে একটি নফল আমল ফরজের মর্যাদায় সিক্ত। সে হিসেবে রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকাই ফরজ হিসেবে আল্লাহর কাছে গণ্য। দান-সদকার এমন ঈর্ষণীয় ফজিলত অন্যান্য মাসে কখনোই পাওয়া যাবে না। শুধু রমজানেই এ অফার সীমাবদ্ধ।
রোজাদারের সহযোগিতা করুন
যায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানি (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।’ (তিরমিজি : ৮০৭)। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পানাহার করিয়ে ইফতার করাবে, সে তার অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৯০৬)।
দানে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; তারাই সফলকাম। মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।’ (সুরা রুম : ৩৮-৩৯)। দান-খয়রাত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা প্রায় শতাধিক আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। কাজেই দান-খয়রাত ও অসহায়কে সহযোগিতা করার বিষয়টি সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এতিম, মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, ভিক্ষুক, মুসাফির ও অসহায়দের প্রতি তাদের দায়িত্ব অপরিসীম। অন্তত এ পবিত্র মাসে খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের বিভিন্ন সহযোগিতা করা ও তাদের প্রাপ্য আদায় করা নেহাৎ জরুরি।
দানে রিজিকে বরকত হয়
দান-সদকা রিজিকে বরকত এনে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনও ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন। তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরও বেশি দেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির : ২৯-৩০)। রাসুল (স.) বলেন, ‘যারা গোপনে দান করবেন, মহান আল্লাহ কঠিন কেয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন।’ (বোখারি : ৬৬০)।
দানকারীর তুলনা
যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের জন্য কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা হলো একটি শস্য বীজ; তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ। প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন, বর্ধিত করে দেন। বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)। তাই যারা গরিব, অসহায়-নিঃস্ব, তাদের সাধ্যানুযায়ী দান করা চাই। সামর্থ্য থাকলে কোনো এক হতদরিদ্র পরিবারের এক মাসের সাহরি ও ইফতারের দায়িত্ব নিতে হবে। এতে অঢেল সওয়াব অর্জনের পাশাপাশি রমজান মাসের পবিত্র ভাব-গাম্ভীর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। ঈদে প্রতিবেশী কিংবা চেনা-জানা কোনো গরিবকে একটি নতুন জামা উপহার দেওয়া চাই। ফুটপাতে বসবাসকারী কোনো শিশুর মুখে হাসি ফোটানো কর্তব্য।
দান-সদকার আসল উপযুক্ত যারা
সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-সদকা ইত্যাদি বলতে সাধারণত দীন-দরিদ্র, ফকির-মিসকিন, এতিম, অন্ধ ও অসহায় শ্রেণির লোকদের দান করা বোঝায়। তবে এ দান-সদকার আসল উপযুক্ত পাত্র কারা, এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের সম্মুখীন হলে মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসুল (সা.)-কে এক প্রত্যাদেশে বলেন, ‘লোকেরা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিমণ্ডঅনাথ, অসহায় এবং মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যে কোনো সৎ কাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালোভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে।’ (সুরা বাকারা : ২১৫)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দ্বীন-দরিদ্রের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষের সঙ্গে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে এবং জাকাত দেবে।’ (সুরা বাকারা : ৮৩)।