ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মানবসেবায় দক্ষিণ আফ্রিকার রমজান

মুসলিম বিশ্বের মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাস ঘিরে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ রয়েছে। রোজা রাখা, ইফতারের পর তারাবির নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয় খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানকার মুসলিমরা কীভাবে রমজান পালন করেন, তা জানাচ্ছেন- মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
মানবসেবায় দক্ষিণ আফ্রিকার রমজান

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন

পবিত্র মাহে রমজান দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে। বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সম্মিলনে দেশটিতে বর্ণিলভাবে রমজান উদযাপিত হয়। ইফতার, তারাবি ও সাহরিসহ সবকিছুতেই চোখে পড়ে হরেক আয়োজন ও ভিন্ন রকম উপস্থাপনা।

রমজানের প্রস্তুতি

রমজানের আগেই ইসলামি সেন্টারগুলো রমজানের পবিত্রতা, গুরুত্ব ও ফজিলত সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা ও সাময়িকী বের করে। তা মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়। মসজিদগুলোতে নেওয়া হয় ইফতার ও তারাবির ব্যাপক প্রস্তুতি।

তারাবির জামাতের ব্যবস্থা

প্রতিটি মসজিদেই তারাবির জামাত হয়। দুই শতাধিক মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় খতমে তারাবি। নারীরা মসজিদের বাইরে ভিন্ন জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করে। যেখানে মসজিদ নেই, সেখানেও ইসলামি সেন্টারগুলোর উদ্যোগে কোনো হলো, কমিউনিটি সেন্টার বা বাড়িভাড়া করে তারাবির জামাতের ব্যবস্থা করা হয়।

অনর্থ ও পাপ পরিহার

রমজানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিমরা সর্বোত্তভাবে অনর্থ ও পাপ পরিহার করে চলেন। যেমন- সিনেমা, নাটক ও নিছক বিনোদনমূলক টিভি সিরিয়ালগুলো দেখেন না তারা।

বিশেষ আমল

প্রতিটি পরিবারে গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের খতম করা হয়। রমজান মাসে সাউথ আফ্রিকানরা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। মরহুম আত্মীয়দের কবর জেয়ারত করে মৃতদের জন্য দোয়া করে থাকেন।

সমাজসেবামূলক কাজের প্রস্তুতি

দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম সংগঠনগুলো রমজানের আগ থেকেই সমাজসেবামূলক কাজের প্রস্তুতি নেয়। স্থানীয় ধনী ও আরব শায়খদের সহযোগিতায় তারা আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন দেশে ইফতার ও সাহরির ব্যবস্থা করে। প্রতি বছর রমজানে তারা দশ লক্ষাধিক মানুষকে আহার করায়। পাঁচ লাখ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করে। স্থানীয় পর্যায়ে ও দরিদ্র্য এলাকার মসজিদগুলোতে সাধারণ মানুষের জন্য ইফতার ও সাহরির ব্যবস্থা করা হয়।

মুসলিম সোসাইটি অব সাউথ আফ্রিকা

রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের পবিত্র রমজানে বাংলাদেশ মুসলিম সোসাইটি অব সাউথ আফ্রিকা নামে বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটি সংগঠন নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকে। অসহায় গরিব-দুঃখীদের মাঝে জাকাত ও ইফতারসামগ্রী বিতরণ করে নিয়মিত। এ ছাড়া রমজানজুড়ে তাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে থাকে। যেমন- ৪টি মসজিদে প্রতিদিন প্রায় ৭০০-এর অধিক মুসলমানদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা, প্রায় ২৪০ জনের অধিক অসহায় ও দরিদ্র মুসলিমদের মাঝে জাকাত ও ইফতার বিতরণ, বয়স্কদের জন্য বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে কোরআন শিক্ষারব্যবস্থা এবং ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়।

মান কাইকারের ঈদের ঘোষণা

শাওয়ালের চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর ঘোষিত হয়। সাউথ আফ্রিকায় ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেছে, এ ঘোষণা করতে পারেন ‘মান কাইকার’রা। আফ্রিকান ভাষায় ‘মান কাইকার’ অর্থ চাঁদের পর্যবেক্ষক। দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে মুসলমানরা প্রধান শহর কেপটাউনে নতুন চাঁদ দেখার অনুষ্ঠানে যায়।

সামাজিক সৌহার্দ্য বিনিময়

শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক নিযুক্ত মান কাইকাররা আনুষ্ঠানিকভাবে চাঁদ দেখার ঘোষণা দিতে পারেন। সি পয়েন্ট প্রোমেনাডে থ্রি অ্যাঙ্কর বে বা সিগন্যাল হিলের ওপর তীরে দাঁড়িয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে তারাই জানাতে পারেন, ‘ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেছে।’ এ ক্ষেত্রেও শর্ত আছে, চাঁদটি অবশ্যই খালি চোখে দেখা যেতে হবে। সবাই মিলে চাঁদ দেখার মাধ্যমে কেপটাউন তথা সাউথ আফ্রিকাবাসী সামাজিক সৌহার্দ্য বিনিময় করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত