মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ
খতিব, কাজী ফিরোজ রশিদ জামে মসজিদ, ঘাঘর বাজার, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রশ্ন : কেউ একটি হজের জন্য ডিপোজিট করল। হজের উদ্দেশ্যে জমাকৃত এ টাকার জাকাত দিতে হবে কী?
উত্তর : জমাকৃত টাকা নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর বছর অতিবাহিত হলে তার জাকাত আদায় করতে হবে। যদিও তা হজের বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জমা করা হোক। যতক্ষণ না টাকাগুলো ওই কাজে খরচ করা হবে, তা জাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত থাকবে। সুতরাং জমাকৃত টাকা নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর বছর অতিক্রান্ত হলেই তার জাকাত দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে শামি : ২/২৬১)।
প্রশ্ন : নিজ শহরের জাকাতের হকদারদের চেয়ে অন্য শহরের মুহাজির মুসলিমরা অধিক নিঃস্ব। এ অবস্থায় কাদের জাকাত দেওয়া উত্তম?
উত্তর : নিজ শহরের চেয়ে অন্য শহরের মুসলমানরা অধিক নিঃস্ব হলে তাদের জাকাত দেওয়া উত্তম হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১০৪১৫, আল বাহরুর রায়েক : ২/২৫০, তাবয়িনুল হাকায়েক : ২/১৩১, আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ : ১/১৭০, রদ্দুল মুহতার : ২/২৫৩)।
প্রশ্ন : কেউ কেউ রমজানে চাঁদা তুলে এলাকার গরিব লোকদের ইফতারির ব্যবস্থা করে এবং গরিবদের হাতে ইফতার তুলে দেয়া হয়। এ আয়োজনের ব্যয় নির্বাহের জন্য জাকাতের টাকা গ্রহণ করা যাবে? আর কেউ এ আয়োজনে জাকাতের টাকা দিলে তার জাকাত আদায় হবে?
উত্তর : যদি প্রত্যেককে ইফতারির মালিক বানিয়ে দেয়া হয়, তবে এ খাতে জাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে এবং এর দ্বারা জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/২১৫, আল বাহরুর রায়েক : ২/২০১, রদ্দুল মুহতার : ২/২৫৭)।
প্রশ্ন : কানাডা প্রবাসী আমার বোনের একটি মেয়ে সন্তান আছে। যে এখনও নাবালেগা। কিন্তু জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত উপহারস্বরূপ প্রাপ্ত তার অনেক স্বর্ণালংকার আছে। এসব স্বর্ণালংকারের জাকাত আদায় করতে হবে?
উত্তর : জাকাত ফরজ হয় প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর। নাবালেগের ওপর জাকাত ফরজ নয়। তাই আপনার বোনের ওই মেয়ে বালেগা হওয়া পর্যন্ত তার স্বর্ণালংকারের ওপর জাকাত আসবে না। (কিতাবুল আসার : ১/৩০০, খিযানাতুল আকমাল : ১/২৪৮, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৭২, আল বাহরুর রায়েক : ২/২০২)।
প্রশ্ন : কেউ যদি আমাকে জাকাতের টাকা দিয়ে তা গরিবদের মাঝে বণ্টন করার দায়িত্ব দেয়, আর আমিও জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রে আমি কি তার অগোচরে উক্ত জাকাতের কিছু অংশগ্রহণ করতে পারব?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি জাকাতদাতার পক্ষ থেকে জাকাত বণ্টনের প্রতিনিধি মাত্র। তাই এ ক্ষেত্রে আপনি জাকাত গ্রহণের যোগ্য হলেও জাকাতদাতার অনুমতি ছাড়া তার দেওয়া জাকাত থেকে আপনার জন্য কিছুই নেওয়া জায়েজ হবে না। বরং তিনি যেখানে ও যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই ব্যয় করতে হবে। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২৪৪, ফতোয়ায়ে খানিয়া : ১/২৬১, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৩/২২৭, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৮৯)।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি প্রতি বছর লুঙ্গি, শাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে জাকাত আদায় করে। এভাবে জাকাতের নিয়তে গাড়িতে করে নিজ এলাকায় লুঙ্গি ও শাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মাঝপথে সেগুলো হারিয়ে যায়। জানার বিষয় হলো, তাকে আবার নতুন করে কিনে জাকাত দিতে হবে নাকি প্রথমবার জাকাতের নিয়তে ক্রয় করার দ্বারাই জাকাত আদায় হয়ে গেছে?
উত্তর : জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির কাছে জাকাতের মাল পৌঁছে দেয়ার আগে জাকাত আদায় হয় না। এ ক্ষেত্রে জাকাতের নিয়তে ক্রয় করা বা কোনো স্থানে পৃথক করে রাখা জাকাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া কাপড়গুলো জাকাত হিসেবে কর্তন হবে না। ওই পরিমাণ জাকাত জাকাতদাতাকে আদায় করতে হবে। (আল বাহরুর রায়েক : ২/২১১, ফতোয়ায়ে খানিয়া : ১/২৬৩, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ৩৯০, আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৭০)।
প্রশ্ন : জাকাত প্রদানকালে ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়া জরুরি কী? ঈদের দিন অনেক গরিব-মিসকিন বখশিশ চায়, তাদেরকে বখশিশস্বরূপ জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে?
উত্তর : জাকাত প্রদানের সময় গ্রহীতাকে জাকাতের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এ ক্ষেত্রে দাতার নিয়তই যথেষ্ট। অতএব, জাকাতের যোগ্য কেউ বখশিশ চাইলে তাকে না জানিয়ে জাকাতের টাকা প্রদান করলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু নিজ ঘরের কর্মচারী বা অধীন কর্মচারীদের জাকাতের টাকা ঈদ বোনাস হিসেবে দেওয়া যাবে না। কারণ, সেগুলো তাদের পারিশ্রমিকেরই অংশবিশেষ। অবশ্য কর্মচারীকে তার নির্ধারিত বেতন ও বোনাস দেওয়ার পর গরিব হওয়ার কারণে জাকাত থেকে কিছু দিতে চাইলে তা জায়েজ হবে। (আল বাহরুর রায়েক : ২/২১২, আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৬৮)।