ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সততা ও বিশ্বস্ততা যাদের মূলধন

২০২২ সালের শুরুর কথা। ভেজালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন কয়েকজন তরুণ। সিলেট বন্দরবাজারের রংমহলে গড়ে তুললেন আতর, পারফিউম ও সুন্নাহসামগ্রীর শপ ‘সেইফ কালেকশন’। আলেম লেখক ও উদ্যোক্তা মুফতি নাজমুল ইসলাম কাসিমী এবং মাওলানা দেলওয়ার হুসাইন ইমরানের যৌথ পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটি বছর পার করল। এরই মধ্যে সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ নাম করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের এ অগ্রযাত্রায় সূচনা ও সাফল্যের গল্প এবং আগামীর পরিকল্পনা শুনিয়েছেন আলোকিত বাংলাদেশের সহ-সম্পাদক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহকে
সততা ও বিশ্বস্ততা যাদের মূলধন

ব্যবসায় আসার কারণ

আল্লাহতায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন, সুদকে হারাম করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বিশ্বস্ত ও আমানতদার ব্যবসায়ী আম্বিয়ায়ে কেরামের সঙ্গে থাকবে।’ একটা সময় ছিল, আলেমরা শুধু পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। নিজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে একমাত্র শিক্ষকতায় সীমাবদ্ধ ছিলেন। করোনাকালীন দুর্যোগের পর আলেমদের সেই সীমাবদ্ধতার জায়গাটি প্রশস্ত হয়েছে। এখন তাদের ব্যবসার প্রবণতাটা চোখে পড়ার মতো। অনেক আলেমই শিক্ষকতা ও দ্বীনি ব্যস্ততার পাশাপাশি ভালো ভালো আইটেম নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। আমরা মূলত এ একই পথের যাত্রী। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, আলেমরা নিজেদের ব্যবসায় যুক্ত করলে ব্যবসার বিশ্বস্ততা, নিরাপত্তা এবং উপকারিতা আরও সমৃদ্ধ হবে। ক্রেতারা আলেমদের বিশ্বস্ততার জন্য ভেজালমুক্ত পণ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে। এতে সমাজে ব্যবসায়িক সেক্টরের দুর্নীতিগুলো এবং ভেজাল পণ্যের প্রবণতা দিনদিন লোপ পাবে।

যখন যেভাবে যাদের প্রেরণা

ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই স্বপ্ন ছিল, শিক্ষক হলে দ্বীনি খেদমতের পাশাপাশি হালাল রিজিকের জন্য ব্যবসা করব। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াকালে দেখেছি, সেখানকার প্রায় সব উস্তাদ কোনো না কোনোভাবে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। অনেক উস্তাদই আমাদের দরস নেওয়ার ফাঁকে ছাত্রদের ব্যবসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। যখন ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিক সমস্যার সমাধান করা যাবে, তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনি খেদমত করা সম্ভব। দ্বীনি খেদমতের প্রতি আর পিছুটান থাকবে না। সে লক্ষ্য পূরণেই আমাদের এ পথে হাঁটা।

শুরুর গল্প যেমন

করোনাকালীন অবসরে প্রথমে অনলাইনে ‘সেইফ কালেকশন’ নামে একটি পেইজ খুলে সামান্য চা পাতা বিক্রি করতাম। পুরো একমাস চা পাতা নিয়ে বারবার পোস্ট দেওয়ার পরও মাত্র ২ কেজি চা পাতার অর্ডার পেয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি। আমাদের স্বপ্ন পূরণে সামনে এগিয়েছি। বিশ্বাস ছিল, হয়তো একদিন বড় কিছু করতে পারব। আল্লাহতায়ালা আমাদের সেই চাওয়া অনেকটা পূর্ণ করেছেন। আমাদের স্বপ্নের সারথি হতে একান্ত ক’জন আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

‘সেইফ কালেকশন’কে এগিয়ে নিতে হাতে হাত রেখেছেন। ফলে অনলাইনের ‘সেইফ কালেকশন’ আজ অফলাইনে অভিজাত শপে রূপ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের ব্যক্তিগত পুঁজি ছিল না। চা পাতা নিয়ে পোস্ট করতাম। কোনো কাস্টমারের অর্ডার পেলে উপস্থিত কোনো ডিলারের কাছ থেকে চা পাতা কিনে ডেলিভারি দিতাম। কিন্তু অফলাইনে আসার পর আমাদের ব্যবসার ধরন বদলে গেছে। শো-রুম নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হলো, আতর-পারফিউম এবং সব ধরনের সুন্নাহ আইটেম নিয়ে কাজ করব। সেভাবেই আমরা আমাদের শপ সাজিয়েছি।

পরিধি যেভাবে বিস্তৃত হলো

আমরা প্রথমে যখন সেইফ কালেকশনের শো-রুম উদ্বোধন করি, তখনও আমাদের শপে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুন্নাহসামগ্রী ছিল না। মোটামুটি কয়েক প্রকারের সুন্নাহসামগ্রী নিয়ে আমাদের পথ চলা শুরু হয়। কিন্তু দিন যত সামনে এগুতে থাকে, আমাদের ব্যবসার পরিধি আরও সমৃদ্ধ হতে থাকে। আমরা খুঁজে খুঁজে দেশি-বিদেশি দামি দামি আতর-পারফিউম এবং আকর্ষণীয় সব সুন্নাহ আইটেম সংগ্রহ করতে থাকি। সেগুলো গ্রাহকের পছন্দনীয় করে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিই। সেইফ কালেকশনের আকর্ষণীয় ‘সুন্নাহ গিফট বক্স’ এর একটি। বিয়ে কিংবা যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান অথবা প্রিয়জনকে উপহার দিতে আমরা সেই গিফট বক্সটি দুটো প্যাকেজে সাজাই। একটি ‘বন্ধু প্যাকেজ’, আরেকটি ‘রমণী প্যাকেজ’ নামে। একটা সময় এ গিফট বক্সটি সবার মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আলহামদুলিল্লাহ, এখন তো সবার মুখে মুখে একটি স্লোগান হয়ে গেছে, বিয়ে মানেই সেইফ কালেকশনের আকর্ষণীয় সুন্নাহ গিফট বক্স।

হতাশা ও সাধনার বয়ান

সফল হতে হলে হতাশাকে জয় করেই সামনে এগিয়ে যেতে হয়। তবে ব্যবসায়িক জীবনে আমাদের উল্লেখযোগ্য তেমন হতাশা বা পেরেশানি নেই। এগিয়ে যেতে কঠোর পরিশ্রম ও সততা আমাদের সঙ্গী হিসেবে কাজ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা এবং পরিশ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ অবধি আমরা সেটা করে যাচ্ছি। যারা সেইফ কালেকশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন, সবাই একে অপরের প্রতি খুব আন্তরিক। সব সময় একে অপরকে প্রেরণা ও সাহস দিই।

সফলতার মুখ

হালালভাবে ব্যবসা করলে শুরুর দিন থেকেই সফলতা শুরু হয়। ব্যবসা মানেই লাভ। পাঁচ টাকার মাল বিক্রি করলে দুই টাকা লাভ আসবেই। আমাদের সফলতা শুরু প্রথম দিন থেকেই। আমাদের এ অগ্রযাত্রায় সুন্নাহসামগ্রীকে সর্বসাধারণের পছন্দনীয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। এমন অনেকে আছেন, যারা আগে নিয়মিত অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম ব্যবহার করতেন। যা ব্যবহার করে নামাজ পড়া বা অন্য ইবাদত করা শরিয়ত সমর্থিত নয়। তারা আজ আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত আতর ও হালাল পারফিউম কিনে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া তারা আমাদের সুন্নাহসামগ্রীর সব আইটেমের নিয়মিত গ্রাহক।

আর্তমানবতায় ভূমিকা

সামথ্যানুযায়ী আমরা সব সময় আর্তমানবতার পাশে দাঁড়িয়েছি। কাছাকাছি সময় নিয়ে বলতে গেলে সিলেটের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমরা প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছি। এ ছাড়া অসহায়দের সহযোগিতায় বিভিন্নভাবে আমাদের অনুদানের ধারা চলমান রয়েছে।

কোথায় কীসের ব্যবসা

সিলেটের বন্দরবাজারের প্রসিদ্ধ শপিংমল রংমহল টাওয়ারের নিচতলা (১০৬ নং দোকান)-এ আমাদের এ অভিজাত শপ ‘সেইফ কালেকশন’। সুন্নাহসামগ্রী নিয়ে মূলত আমাদের ব্যবসায়িক পথচলা শুরু। এখানে দেশি-বিদেশি আতর, উন্নতমানের ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ডের হালাল পারফিউম, আবা, রকমারি টুপি, কাশ্মীরি রুমাল, কাশ্মীরি চাদর, জায়নামাজ, বোরকাণ্ডখিমার, হিজাব, সুন্নাহ খাবার আইটেম এবং হালাল প্রসাধনীসহ সব ধরনের সুন্নাহ আইটেম রয়েছে। সেবার ক্ষেত্রে আমরা অনলাইন-অফলাইন দু’ভাবেই পণ্য বিক্রি করে থাকি। সারাদেশে আমাদের হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা রয়েছে। ফেইসবুকে facebook.com/safecollectionbd অথবা ০১৭০১ ৫৮১ ৯৯৪ নম্বরে ওয়াটসঅ্যাপে পণ্য অর্ডার করলে ১-৩ দিনের ভেতর দেশের যে কোনো অঞ্চলে আমরা পণ্য ডেলিভারি দিই।

আদর্শ ও পরিকল্পনা

সততা ও বিশ্বস্ততাই আমাদের মূলধন। কাস্টমারের কাছে ভালো পণ্য কম লাভে বিক্রি করা আমাদের লক্ষ্য। এ নীতির ওপর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সেইফ কালেকশনকে লিমিটেড একটি প্রতিষ্ঠান করা আমাদের টার্গেট। সে লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সেইফকে বিশ্বসেরা ব্রান্ড করার ইচ্ছে। সবার দোয়া ও সহযোগিতা আমাদের কামনা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত