ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদের কেনাকাটায় ইসলামের নির্দেশনা

ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের দু’টি দিন। রাসুল (সা.) এ দিন দু’টিকে ঈদের দিন তথা আনন্দের দিন বলে ঘোষণা করেছেন। ইসলাম ঈদের দিনে আনন্দঘন সময় কাটাতে এবং ভালো খাবার ও পোশাক পরিধানে উৎসাহিত করেছে। তবে ইসলামি শরিয়ার দৃষ্টিতে ঈদ নিছক কোনো আনন্দ উৎসবের নাম নয়, বরং তা ইবাদতও বটে। তাই ঈদ-আনন্দেও মোমিনের সংযম ও সংযত আচরণ কাম্য। ঈদ যেহেতু একটি ধর্মীয় উৎসব, তাই ঈদের আনন্দে দ্বীনি বৈশিষ্ট্য রক্ষা করাও প্রত্যেক মোমিনের জন্য আবশ্যক। হাল আমলে ঈদকে কেন্দ্র করে ঈদের আগ থেকেই শুরু হয় যাবতীয় প্রস্তুতি। মার্কেটিং বা ঈদের কেনাকাটা এর অন্যতম। ঈদ-আনন্দের বড় একটি অংশ চলে যায় এতে। ঈদের কেনাকাটায় ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা জানাচ্ছেন - মিনহাজুল আরিফীন
ঈদের কেনাকাটায় ইসলামের নির্দেশনা

নামাজ কাজা না করা

বহু মানুষ ঈদের কেনাকাটায় এমনভাবে ডুবে যায়, কেনাকাটার সময় নামাজের কথাটুকুও ভুলে যায় কিংবা ইচ্ছে করেই নামাজের সময়ও কেনাকাটায় ব?্যস্ত থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নামাজ কাজা হয়ে যায়। অথচ এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর কঠিন হুঁশিয়ারি হলো, ‘তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা নামাজ নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।’ (সুরা মারইয়াম : ৫৯)।

পর্দা লঙ্ঘন না করা

পর্দা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ বিধান। সর্বত্র নারী-পুরুষ উভয়ের জন?্য পর্দার বিধান মান্য করা অত?্যাবশ্যক। কিন্তু আফসোসের কথা হচ্ছে, ঈদের কেনাকাটার সময় সাধারণত দেখা যায়, নারী-পুরুষ উভয়ে বাহারি সাজসজ্জার আড়ম্বরতা প্রকাশ করে বাইরে বেরোয়। পাশাপাশি এ সময়টাতে মার্কেটে নারী-পুরুষের ব?্যাপক সমাবেশ ঘটে। ফলে প্রবৃত্তির তাড়নায়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেককেই পর্দার বিধানে বেশ শৈথিল্য প্রদর্শন করতে দেখা যায়। অর্থাৎ পর্দার বিধান যথাযথ রক্ষা করে না। অথচ পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশ হলো, ‘মোমিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা নুর : ৩০)।

অর্থ অপচয় না করা

ঈদে সামর্থ্যবান পরিবারগুলো প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনেই অর্থ বেশি ব্যয় করে। অন?্যদিকে দেখা যায়, প্রতিবেশীদের মাঝেই অনেক গরিব-দুস্থ পরিবার এমন থাকে, যারা অন্ন-বস্ত্রের অভাবে প্রতিনিয়ত হাহাকার করে। অথচ পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না। যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)।

একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঋণ না করা

ঈদের সময় বহু মানুষ লৌকিকতা পরবশ হয়ে নিজের সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করে। ফলে পরবর্তীতে ঋণের ঘানি টানতে হয়। অথচ কোরআনের ঘোষণা হলো, ‘আল্লাহ কারও ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে, তার প্রতিফল তারই; আর মন্দ যা উপার্জন করে, তার প্রতিফল তারই।’ (সুরা বাকারা : ২৮৬)।

ব্যবসায় প্রতারণা না করা

ঈদের বাজারে বহু ব্যবসায়ী প্রতারণার সুযোগ নেয়। তারা পণ?্যসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নিম্নমানের পণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি, ত্রুটিপূর্ণ পণ্য সরবরাহের মতো নানা রকম অসাদুপায়ের আশ্রয় নেয়। পবিত্র কোরআনে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিমাপ ও ওজন কর, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু থেকে কম দিও না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না।’ (সুরা হুদ : ৮৫)।

কেনাকাটা হোক মধ্যমপন্থায়

ইসলাম অন্য সব বিষয়ের মতো কেনাকাটাতেও সংযমী হওয়ার নির্দেশ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখ না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৯)।

ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা

ঈদের কেনাকাটায় অর্থ অপব্যয় না করে তা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারি। যেন দুর্দিনে তা উপকারে আসে। কেননা, কোরআন নির্বোধের মতো অর্থ ব্যয় করতে নিষেধ করেছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম করেছেন, তা নির্বোধ মালিকদের হাতে অর্পণ করো না।’ (সুরা নিসা : ৫)।

গরিবদের সঙ্গে হোক ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি

ঈদের সময় অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ ব্যয় না করে তা দিয়ে আমরা সমাজের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। পবিত্র কোরআনে ধনীদের মানবিক কাজে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ প্রদান করে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। তবে কিছুতেই অপব্যয় করো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬)।

সদকাতুল ফিতর আদায় করা

রমজান মাসের শেষাংশে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আলেমরা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের জাকাত আদায়েরও পরামর্শ দেন। যেন দাতা রমজানের বরকত লাভ করতে পারে এবং গ্রহীতা ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে। অথচ বহু লোক দু’হাত ভরে ঈদের কেনাকাটা করে; কিন্তু যথাযথভাবে সদকাতুল ফিতর ও জাকাত আদায় করে না। সদকাতুল ফিতরের ব?্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘প্রত্যেক স্বাধীন, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের ওপর রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক বা যব হোক এক সা পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ওপর ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বোখারি : ১৫০৩)।

শরিয়তের সীমা রক্ষা করা

কেনাকাটা, চলাফেরা সবকিছুতে শরিয়তের সীমা রক্ষা করা চাই। বিশেষত মহিমান্বিত রমজানের বরকত থেকে যেন আমরা বঞ্চিত হয়ে না যাই, সেদিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। কেননা, রাসুল (সা.) রমজান ও শবেকদরের বরকত থেকে বঞ্চিত ব?্যক্তির ব?্যাপারে সাবধান-বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলিধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গোনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (তিরমিজি : ৩৫৪৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত