ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাকাতের প্রয়োজনীয়তা

ওমর ইবনে আখতার
জাকাতের প্রয়োজনীয়তা

যেখানে পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রের মতো কুফরি অর্থব্যবস্থাগুলো মানব সমাজের অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে, সেখানে ইসলামের জাকাত-বিধান জনগণকে উপহার দিয়েছে চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ নিখুঁত এক অর্থব্যবস্থা। ইসলাম সম্পদের লাগামহীন সঞ্চয়কে নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে এবং এক নায়কতন্ত্রের কাছে জনগণের অর্থ জিম্মি থাকার মতো ভয়ংকর সমাজতন্ত্র থেকে সমাজকে মুক্ত করেছে। ইসলামের অর্থনীতি ব্যবস্থা এ নির্দেশ প্রদান করে, ধন-সম্পদ জমা ও সঞ্চয় করার জন্য নয়; বরং একে বণ্টন করতে হবে। যেন মানুষের মাঝে সম্পদের ভারসাম্য অক্ষুণ্ন থাকে এবং ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর হয়।

জাকাতের প্রতি গুরুত্বারোপ

মানব সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ঠিক রাখতে ইসলাম জাকাতের ব্যাপারে ব্যাপকাকারে গুরুত্ব প্রদান করেছে। নামাজ ইসলামের সবচেয়ে বড় হুকুম মুসলমান হওয়ার পর। এই নামাজ আর জাকাতকে কোরআনে একসঙ্গে ৩০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। আর এদের উল্লেখ যেহেতু একসঙ্গে, তাই জাকাত না দিলে নামাজও হবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমাদের নামাজ কায়েম করার এবং জাকাত প্রদান করার হুকুম দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি (সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও) জাকাত আদায় করে না, তার নামাজও কবুল হয় না।’ (ফাজায়েলে সাদাকাত : ১/৩৮৮)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির নামাজ কবুল করেন না, যে জাকাত আদায় করে না। আল্লাহতায়ালা যখন নামাজ এবং জাকাতকে একত্রে বলেছেন, তুমি তাকে পৃথক করো না।’ (কানজুল উম্মাল)। তদুপরি জাকাত আদায় না করলে মালও পবিত্র হয় না। কারণ, জাকাত ধন-সম্পদ পবিত্রকারী।

জাকাতের ঐতিহাসিক সুফল

একবার ইয়েমেনের গভর্নর মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) ইয়েমেনের এক-তৃতীয়াংশ জাকাত কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিলেন। খলিফা ওমর (রা.) বললেন, ‘তোমাকে কি ট্যাক্স উসুল করতে পাঠিয়েছি? ধনীদের থেকে নিয়ে ওখানেই গরিবদের মাঝে দিয়ে দাও।’ গভর্নর জানালেন, ‘জাকাত নেয়ার কেউ নেই।’ দ্বিতীয় বছর অর্ধেক জাকাত এবং পরের বছর পুরো জাকাত মদিনায় পাঠিয়ে দিলেন। জানালেন, জাকাত নেয়ার মতো গরিব লোক ইয়েমেনে নেই। (আল আমওয়াল : ৫৯৬)। অনুরূপ ঘটেছে ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-এর সময়কালেও। আরও আশ্চর্যের ঘটনা ঘটেছে অটোমান সাম্রাজ্যের সপ্তম খলিফা মুহাম্মদ আল ফাতিহ (রহ.)-এর সময়। তার আমলে এক মুসলমান জাকাতের টাকা দেয়ার কাউকে পেল না। অগত্যা থলিতে করে চৌরাস্তায় ঝুলিয়ে দিল। লিখে দিল, ‘ভাই! আমি অনেক খুজেঁও কোনো ফকির পাইনি। তুমি যদি অভাবী হও, নির্দ্বিধায় এটা গ্রহণ করতে পার।’ কথিত আছে, তিন মাস ঝুলে ছিল থলিটি। তবু কেউ নেয়নি।

জাকাত প্রদানে লক্ষ্যণীয়

আমাদের সমাজে বর্তমানে জাকাত হিসেবে কাপড় দেয়া হয়। এই কাপড় দেয়ার ট্রেডিশন কোথা থেকে এসেছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে নিয়ম হলো- যাকে দেবে, তাকে টাকার মালিক বানিয়ে দেবে। একজনকে এ পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে, যাতে সে কিছু করতে পারে। কমপক্ষে এতটুকু দেয়া, যেন ওইদিন তাকে কারও কাছে হাত পাততে না হয়। আর যদি টাকা না দিয়ে রিকশা, সেলাই মেশিন অথবা একটি গাভী বা এ জাতীয় কিছু কিনে দেয়, তাহলে এটা আরও ভালো হবে। তার জীবিকা উপার্জনের একটি মাধ্যম হয়ে যাবে এতে। আর জাকাতের উদ্দেশ্যও সফল হবে পরিপূর্ণভাবে।

যাদের ওপর জাকাত ফরজ

নিত্যদিনের প্রয়োজন পূরণ করার পর এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেয়ার পর যদি কারও কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৫৯৫ গ্রাম) পরিমাণ রুপা কিংবা সাড়ে সাত তোলা (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা এর সমমূল্যের সম্পদ ১ বছর সময় পর্যন্ত সঞ্চিত থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি সম্পদশালী। তাকে জাকাত প্রদান করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে জাকাত নিন, যা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’ (সুরা তওবা : ১০৩)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘সালাত কায়েম কর, জাকাত আদায় কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর। আল্লাহ তো চান তোমাদের কলুষমুক্ত করে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন করতে।’ (সুরা আহজাব : ৩৩)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত