নানাবিধ উপকার রয়েছে জাকাত প্রদানে। জাকাত আদায়কারীর মন-মননে স্বচ্ছতা ও প্রশান্তি আসে। মাল পবিত্র হয় এবং বাড়ে। যাবতীয় মসিবত থেকেও নিরাপদ থাকে। অর্থে সমতা আসে, সম্পদ কুক্ষিগত হয় না। অনাদায়ে ভয়ঙ্কর অনেক শাস্তির কথা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যে জাতি জাকাত অস্বীকার করে ও আদায়ে গড়িমসি করে, আল্লাহতায়ালা তাদের কঠিন ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘জলে-স্থলে সম্পদ বিনষ্ট হয় শুধু জাকাত আটকে রাখার কারণে।’ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৪৩৩৫)। তিনি আরও বলেন, ‘যে জাতি জাকাত দেয় না, আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ২৫৭৭)।
যেসব সম্পদে জাকাত ফরজ
সব ধরনের সম্পদে জাকাত আসে না। যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হয়, তা হলো-
১. স্বর্ণ : কারও কাছে শুধু স্বর্ণ আছে, অন্য কোনো সম্পদ নেই। তাহলে (সর্বনিম্ন) ৭.৫০ ভরি/তোলা বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ১ বছর অতিক্রান্ত হলে জাকাত ফরজ, এর কমে নয়। সাড়ে সাত ভরির বর্তমান পরিমাপ ৮৭.৪৭৯ গ্রাম।
২. রুপা : কারও কাছে শুধু রুপা আছে, অন্য সম্পদ নেই। তাহলে (সর্বনিম্ন) ৫২.৫০ ভরি/তোলা বা তার বেশি পরিমাণ বছর অতিক্রম করলে জাকাত ফরজ। সাড়ে বায়ান্নো তোলার পরিমাণ ৫৯৫ গ্রাম। স্বর্ণ-রুপা সর্বদা বর্ধনশীল সম্পদ। চাই তা মুদ্রা আকারে হোক বা অলংকার আকারে, ব্যবহার হোক বা না হোক। সর্বাবস্থায় নেসাব পরিমাণ হলে বছর শেষে জাকাত ফরজ হবে। (ফতোয়ায়ে শামি : ২/২৯৮)।
৩. নগদ অর্থ : ৫৯৫ গ্রাম রুপা বা ৮৭.৪৭৯ গ্রাম স্বর্ণের যে দাম হয়, সে পরিমাণ নগদ ক্যাশ থাকলে এবং বছর অতিক্রম করলে তাতে জাকাত ফরজ। চাই তা নিজের কাছে কিংবা অন্যের কাছে জমা থাকুক অথবা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকুক। দোকানের বাকি (যা পাওয়ার আশা আছে), ব্যাংকের ডিপোজিট, হজের উদ্দেশ্যে নিজের অ্যাকাউন্টে রাখা টাকাও এর শামিল। সুতরাং এ পরিমাণ টাকা কারও কাছে থাকলে এবং এক বছর অতিক্রান্ত হলে তাতে জাকাত দেয়া ফরজ।
৪. ব্যবসায়িক পণ্য : ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর জাকাত আবশ্যক, যদি তা নেসাব পরিমাণ হয়। যে সম্পদের ওপর জাকাত আসে না (যেমন- মণিমুক্তা, হিরা-জহরত), সেগুলোও যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেনা হয়, বছর শেষে তাতেও জাকাত ফরজ হবে।
৫. জমিন থেকে উৎপাদিত শষ্য : (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য) যেমন- ধান, গম, সরিষা, ভ্ট্টুা ইত্যাদি অথবা ফলফলাদি (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য)। যেমন- খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি। এগুলোর মূল্য যদি নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে জাকাত আবশ্যক। তবে মূল্য নির্ধারণে রুপার নেসাবের হিসাব করাই সবচেয়ে নিরাপদ এবং গরিবের উপকার। তবে জমিন থেকে গ্যাস বেরুলে তার ওপর জাকাত নেই। অবশ্য বিক্রিলব্ধ লাভের ওপর জাকাত ফরজ হবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/৩৪৬)।
জাকাত কতটুকু দিতে হয়?
মোট সম্পদ থেকে শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত আদায় করতে হয়। হাজারে ২৫ টাকা, লাখে ২৫০০ টাকা, কোটিতে ২,৫০,০০০ টাকা। বছর দ্বারা চান্দ্র বছর উদ্দেশ্য, সৌরবর্ষ নয়। যেমন- শাওয়ালের ৫ তারিখে নেসাবের মালিক হয়েছে, আগামী বছর শাওয়ালের ৫ তারিখ বছরের শেষ দিন। সেই দিনের হিসাব অনুযায়ী জাকাত প্রদান করতে হবে। শুধু সওয়াবের জন্য রমজান পর্যন্ত বিলম্বিত করা উচিত নয়। হিসাবের সুবিধার্থে প্রত্যেকেরই এভাবে নির্দিষ্ট একটা দিন ধার্য করে নেয়া আবশ্যক। (আহকামে জাকাত)। যে পরিমাণ জাকাত আদায় করা ওয়াজিব, তার বেশি দেয়াও জায়েজ আছে। এতে অতিরিক্ত সওয়াব হয়। (ফতোয়ায়ে শামি : ২/২৯৩)।